Biochemistry And Molecular Biology (BMB)- SUST

সাবজেক্ট রিভিউঃ
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (#BMB)
লেখাঃ তানভীর হোসেন তানিম (২০১০ ব্যাচ)
[নিজের মনের রিভিউয়ের উপর কোন রিভিউ নাই। তোমাদের জানার ডিমান্ড ফুলফিল করতেই একেকটা সাবজেক্ট নিয়ে লেখা। ]
সবার প্রথমেই তোমাদের জানাচ্ছি অভিনন্দন। তোমরা পুরো বাংলাদেশের ভাগ্যবান কয়েক শতাংশ যারা শাবিপ্রবি-তে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছ। এতে তোমাদের পরিশ্রম এবং মেধার যতটুকু ভূমিকা তার চেয়েও বড় ভূমিকা তোমাদের বাবা-মায়ের। তাই তাঁদের ধন্যবাদ (অসংখ্য!!!) দিতে চাই তোমাদের থেকেও বেশি।
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ যে সাবজেক্ট চাও সেটাই নিতে পারবে, আবার কেউ বাধ্য হয়ে পছন্দ না অথবা কিছু না জেনে একটা সাবজেক্টে ভর্তি হবে। সবাই জিজ্ঞেস করে ভাল সাবজেক্ট কোনটা। উত্তর হচ্ছে পৃথিবীতে সব সাবজেক্টই ভাল। খারাপ সাবজেক্ট বলে কিছু যদি থাকত তাহলে নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয় এসব সাবজেক্ট পড়ানো বন্ধ করে দিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন দীর্ঘ চার বছরের। কেউ তথাকথিত ভাল সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারলেই বাকি জীবন সে ঘুমিয়ে কাটালে চলবে এমনটা কখনই না। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে ভাল করতে পারে। মানুষ তার ভাগ্য খারাপ নাকি ভাল সেটা বর্তমান দেখে বুঝতে পারে না। সেটা বুঝতে ভবিষ্যতে যাত্রা করতে হয় বেশি চিন্তা ভাবনা না করে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি-র বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান। সোজা ভাষায় এই সাবজেক্টে প্রাণের রসায়ন নিয়ে গল্প সল্প করে আর জীবনকে ব্যাখ্যা করে আনবিক পর্যায়ে। তোমার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুমি কি কর, কেন কর, কেন সুখী হও, কেন দুখি হও, কিভাবে এত বড় হলে, কেন বুড়ো হবে,এমনকি কেন প্রেম কর সেটাও আলাপ আলোচনা করে এই সাবজেক্ট। মরলেও রেহাই নেই। তোমার ডি এন এ খুঁজে বায়োকেমিস্ট বলে দিতে পারবেন তুমি কে, কি তোমার পরিচয়।
একটু দুষ্টু করে বলি। এই সাবজেক্ট হচ্ছে একটা দুষ্টু ছেলের মত যে অনেকগুলা মেয়ের সাথে প্রেম করে। এই সাবজেক্টে পড়ে তুমি যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামার হতে চাও হতে পারবে (Bioinformatics), যদি হতে চাও পদার্থবিদ (Biophysics) তাও পারবে, যদি হতে চাও প্রকৌশলী (Bioengineer/ Genetic Engineer) তাও পারবে। যদি হতে চাও এলিয়েনবিদ (Alien Biology) তাও পারবে। মানুষের শরীরে কিভাবে রোগ জীবাণু আক্রমন করে, আমাদের দেহের Immune সিস্টেম (Immunology) কিভাবে সৈন্য সামন্ত নিয়ে সেটা প্রতিরোধ করে, না পারলে আমরা কিভাবে ওষুধ বানিয়ে (Pharmacy) সেগুলো ধ্বংস করতে পারি এত্ত সব মজার জিনিস যে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আমাদের নিজেদের কিছু কোষ কিভাবে রাজাকার হয়ে আমাদের ক্ষতি করে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায় (Onclology) তাও বুঝতে পারবে। এই সাবজেক্টের কিছু রহস্যময় আর রোমাঞ্চকর দিক আছে। যেমনঃ কিভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে এক্স-মেনদের মত মানুষ অথবা অন্য প্রানী বানানো যায়, যে কোন প্রাণীর কাছ থেকে একটু কোষ নিয়ে ক্লোনিং করে হুবহু একই রকম আরেকটি প্রাণী বানানো যায়, স্টেম সেল দিয়ে কিভাবে নতুন হাত পা ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ একবারে নতুন করে তৈরি করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরকম আরও অনেক কিছু আছে বলে শেষ করতে পারবনা। একবার ভর্তি হও প্রেমে পড়ে যাবে। শাবিপ্রবি-র এই সাবজেক্টের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। এই তো সেদিন। এরই মধ্যে এখানে যেমন ভাল পড়ালেখার সব সুযোগ সুবিধা আছে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই ডিপার্টমেন্টের সব শিক্ষকই একবারে তরুন। তাঁদের সবার আছে বাইরের দেশের বড় মানের ডিগ্রি, ভাল গবেষণাগার এবং ভাল প্রতিষ্ঠানে (মাল্টিন্যাশানাল ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি) চাকরির অভিজ্ঞতা যাঁরা তোমাকে দিনরাত অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন বড় কিছু করার। তোমাকে বুঝতে শেখাবেন যে ছোট স্বপ্ন দেখা মারাত্মক অপরাধ।
গত শতাব্দী ছিল ভৌত বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির। এই শতাব্দী হতে যাচ্ছে প্রাণরসায়নের। বিজ্ঞানের এই দিকটা এখনও মানুষের কাছে বেশিরভাগই অজানা। প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। যেমন ধর ই-বোলা ভাইরাস। এখনও এইডস আর ক্যানসারের ভাল কোন ওষুধ আবিস্কার হয়নি। তাই সারা পৃথিবীতে প্রাণরসায়ন নিয়ে চলছে প্রচুর গবেষণা। আগামী শতাব্দির সব চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করতে আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে অনেক গবেষণা। এরই মধ্যে তোমরা পাটের জিনোম প্রজেক্টের কথা জান। শুনেছ ড. মাকসুদুল আলমের কথা। তোমাদেরকে একজন সাস্টিয়ানের নাম বলি। ড. সিদ্দিকি যিনি শাবিপ্রবি থেকে পড়াশুনা করে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান ইন্সিটিউট অফ বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ন্যানোটেকনলজিতে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণারত। পুরো বিশ্বে বিজ্ঞানের এই দিকটায় বাংলাদেশি আরও অনেকে আছেন যারা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
সবার প্রশ্ন থাকে চাকরি কোথায় এই সাবজেক্টের। সারা পৃথিবীতে চাকরির ব্যাপারটাই ধাঁধার মত। কেউ হয়ত প্রকৌশলী কিন্তু চাকরি করে ব্যাঙ্কে। আজকাল ডাক্তাররাও এমবিএ করে। তুমি যদি মনে কর এবং দিন শেষে প্রমান কর তুমি কেউ একজন তাহলে চাকরি তোমার পেছনে ঘুরবে। সবার সব ব্যাপার সবসময় ভাল লাগেনা। বায়োকেমিস্ট্রি এই ব্যাপারটা বেশি প্রশ্রয় দেয় কারন বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে সবই দরকার হয়। যা খুশি হতে পার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে তোমার কি করতে ভাল লাগে আর কি করলে তুমি সুখী হবে। তাই চাকরির নিয়ে বেশি কথা না বলি। তোমরা গুগল দৈত্যে সার্চ দিলেই সারাবিশ্বে এই সাবজেক্টের চাকরি কোথায় সব জানতে পারবে। আরেকটু বেশি উৎসাহী হলে এই সাবজেক্টের স্যালারি নিয়েও সার্চ দিয়ে দেখতে পার।
অনেকেই মনে করতে পার যে বায়োকেমিস্ট্রিতে যেহেতু বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি আছে তাই প্রচুর মুখস্ত করতে হয়। এই ধারনা কতটুকু ভুল সেটা বুঝতে ইউটিউবে বিখ্যাত Eric Lander এর লেকচার দেখতে পার। এই ভদ্রলোক গণিত শাস্ত্রে পি এইচ ডি শেষে এখন MIT তে মলিকুলার বায়োলজি পড়ান!
অনেক কথা বললাম। যারা ভর্তি হবে এই সাবজেক্টে, সবার সাথে দেখা হবে। যারা হবেনা তাদের সাথেও। একটা সত্যি ব্যাপার হচ্ছে, সাস্টে ব্রিলিয়ান্ট কেউ ভর্তি হয় না, সাস্টে ভর্তি হয় ক্রিয়েটিভরা, যাদেরকে দিন শেষে লোকে ব্রিলিয়ান্ট বলে।
Welcome to the most beautiful and the cutest campus of Bangladesh.

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.