কোনো বোর্ড পরিক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়েও হাবিপ্রবিতে ৫৭ তম হবার গল্প


সফলতার_পথযাত্রী ১০
জীবন নিয়ে কি লিখব।
কীভাবে লিখব।
ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।তবুও জীবনের প্রথম সফলতা লিখতেই হয়।আমার জে.এস.সি. তে ফলাফল ছিল ৩.৮৬।জীবনের প্রথম ধাক্কাটা আমি খাই ঐখানেই। তখন থেকেই মূলত বইয়ের সাথে সম্পর্ক।দুই বছর ভালই কাটল,ক্লাসের ২/৩ রোলটা আমার জন্যই বরাদ্দ ছিল।ছিলাম ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র। স্কুল লাইফ পার হলো ৪.৫০ ফলাফল নিয়ে। পরিবারের সাথে যুদ্ধ করলাম জেলা শহরে গিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পরার জন্য কিন্তু যুদ্ধে আমি পরাজিত হলাম। আমাকে ভর্তি করা হলো মফস্বলের একটা কলেজে। যদিও কলেজটা ছিল সরকারি কিন্তু ক্লাস ঠিক মতো হতো না। সবাই পড়ছে আমিও পড়ছি কিন্তু আমার পড়াটা মেবি নিয়মিত ছিল তাই কলেজে ১/২/৩ পজিশনগুলো আমার জন্য বরাদ্দ ছিল। কলেজ লাইফও পার হলো ৪.৬৭ ফলাফল নিয়ে। অনেক আগে থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ব। তাই মা বাবা পাঠালেন জেলা শহরে ভর্তি কোচিং করার জন্য। ভর্তি কোচিং করতে আসার পড় থেকেই শুরু হয় আমার প্রচন্ড মাথায় যন্ত্রণা। ঐ যন্ত্রণা নিয়েও পড়তে থাকলাম এমনও অনেক দিন গেছে পড়তেও পাড়ি নি মাথার যন্ত্রণায়। ভর্তি কোচিং-এ নিয়মিত ছিলাম কিন্তু কোচিং এর একটা পরীক্ষায় মাত্র উর্ত্তীর্ণ হয়েছিলাম! অবশেষে সময় চলে এলো ঢাবির এডমিশন টেষ্টের। দিলাম ঢাকা ও জগন্নাথে পরীক্ষা। ঢাবির পরীক্ষা ভাল হয়েছিল আর জগন্নাথের পরীক্ষা হয়েছিল জঘন্য।
আমি ভেবে নিয়েছিলাম চান্স হলে ঢাবিতেই হবে।অবশেষে পরীক্ষার ফলাফল দিল। ঢাবিতে পজিশন -১৬৬১ আর জগন্নাথে -১১৭৬। কোথাও চান্স হলো না! হতাশা আকড়ে ধরল চারদিক থেকে। বাসা থেকে মা বলতে লাগলো -তুমি কি পরীক্ষা দাও? কোথাও চান্স পাও না।সে সময় শুধু একটা মানুষই ছিল যে বলতো বাবা,চেষ্টা করো একটা না একটায় হয়ে যাবে এবং সে ব্যাক্তিটি ছিলেন আমার বাবা। তারপর পড়লাম কিছুদিন এবং গেলাম জাহাঙ্গীরনগরে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুনলাম দ্বিতীয় বার যারা পরীক্ষা দিবে তাদের প্রথম টার্গেট হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। রীতিমতো পরীক্ষা দিলাম এবং রীতি মতোই কোন সিরিয়াল আসলো না আবারো একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
তারপর গেলাম রাজশাহী,দিলাম পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে! রাজশাহী থেকে গেলাম চট্টগ্রাম, দিলাম পরীক্ষা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়িতে আসলাম এবং শুনলাম রেজাল্ট দিতে কিছুদিন দেরি হবে। পড়া শুরু করলাম হাবিপ্রবির জন্য। কিছুদিন পর রাজশাহী আর চট্টগ্রামের ফলাফল দিল। এখানেও ওয়েটিং।
বুঝতে পারলাম দূর্বলতাটা ইংরেজীতে। টানা ৬ দিন ১৮ ঘন্টা করে ইংরেজী পড়লাম তারপর গেলাম দিনাজপুর হাবিপ্রবিতে পরীক্ষা দিতে। দিলাম পরীক্ষা ইংরেজীটা ভাল হয়েছিল অনেক কিন্তু কনফিডেন্স ছিল না যে চান্স পাব তাই দিনাজপুর থেকে এসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পড়া শুরু করে দিলাম। কিছুদিন পর হাবিপ্রবির ফলাফল দিল। ওয়েরসাইটে প্রবলেম ছিল তাই বিকালের বদলে রেজাল্ট দেখতে পাড়লাম রাতে। রেজাল্ট দেখে আমার আনন্দের সীমা রইল না আমি হাবিপ্রবিতে ৫৭ তম হয়েছি!
© শফিকুজ্জামান সৌরভ
৫৭ তম,সি ইউনিট(ব্যবসায় শিক্ষা)
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.