সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার প্রাচীনতম ও অন্যতম শাখা যার বাংলা পুরকৌশল বিদ্যা । সঙ্গত কারনেই সারা পৃথিবীর প্রকৌশল বিদ্যায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে এই শাখাটি। স্বপ্ন যাদের দেশ গড়ার তাদের জন্যই পুরকৌশল। কেন পড়বেন ?চাহিদা
চাহিদার কথা বলতে গেলে বলতে হয় কিছু কিছু বিষয়ের চাহিদা সেই প্রাচীন কালেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। পুরকৌশল তেমনি একটি বিষয়।সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ হল নকশা এবং নির্মান করা আর সেই কাজ এর ক্ষেত্র গুলো হল রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, সেতু, সুড়ংগ, পানি সরবরাহ এবং নিস্কাশন ব্যবস্থা, বাধ, পোতাশ্রয়, রেলপথ, ফেরিঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ভবন এমনকি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ও এই শাখার বাইরে না ।
কি কি পড়ানো হয় –
পুরকৌশল একটা ব্যাপক বিষয়। তবে interest আর পরিশ্রম থাকলে সহজেই ভাল করা সম্ভব। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান শাখা ৫ টি এছাড়াও আরো কিছু শাখা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধীনেই পড়ে
এর ভাগগুলি নিচে দেয়া হলো:
- 1 .Structural Engineering - স্ট্রাকচারাল প্রকৌশল
- 2 .Geotechnical Engineering- মৃত্তিকা প্রকৌশল
- 3.Transportation Engineering- পরিবহন প্রকৌশল
- 4.Water Resource Engineering- পানি সম্পদ প্রকৌশল
- 5.Environmental Engineering- পরিবেশ প্রকৌশল
- 6.Earthquake Engineering- ভুমিকম্প প্রকৌশল
- 7.Urban Planning Engineering- নগর উন্নয়ন বা নকশা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান শাখাগুলোর বিস্তারিত
****স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং**** বাড়ি,হোটেল, পার্ক, ব্রীজ, বিল্ডিং ইত্যাদির উপরে নিজস্ব ভার বা বাইরের ভার প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ বাতাস,পানি,ভুমিকম্প,তাপমাত্রা ইত্যাদির প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য সিমেন্ট,বালি,রি-ইনফোর্সমেন্ট,কাঠ, অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে সঠিক ডিজাইন করা হলো এই শাখার কাজ।****জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং**** প্রায় সকল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাতেই এটি কাজে লাগে। কারণ বেশির ভাগ স্ট্রাকচার ভুমির উপর অবস্থিত। মাটি বা পাথরের এর উপর স্ট্রাকচার এর প্রভাব এবং এদের বৈশিষ্ঠ্য নিয়ে আলোচনা করে এই শাখাটি। ভুগর্ভের সিপেজ,ভুমিকম্পের প্রভাব, স্থিতিশিলতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাটি। বাধ, রিটেইনিং ওয়াল, ফাউন্ডেশন ইত্যাদির আংশিক ডিজাইন করা হয় এই শাখার মাধ্যমে।
****ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং**** পানি সম্পদ প্রকৌশল পানির ভৌত অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। বন্যা, শহরের-কারখানা-সেচ এর পানি সরবরাহ, নদি ভাঙ্গন রোধ, নদির শাষন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং ডিজাইন করে থাকে। হাইড্রলিক পাওয়ার, বাধ, খাল, পানিধস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে এই শাখাটি।
****ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং**** কোন সমাজের বৈশিষ্ঠ্য বা গুন এর যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। কোন সমাজের উন্নয়ন অনেকটা প্রভাবিত হয় এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। মানুষ, মালামাল ইত্যাদি পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষনা, ডিজাইন, সমস্যা, সমাধান নিয়ে কাজ করে ট্র্যান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। অল্প রাস্তায় অধিক পরিবহন সুবিধা, দুর্ঘটনা কমানো, খরচ কমানো ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে এই শাখাটি।
****এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং**** পরিবেশ তথা বাতাস এবং পানির দুষণ রোধ, বিশুদ্ধকরণ ইত্যাদি করা এই শাখার কাজ। বর্তমানে এটি একটি গুরুত্বপুর্ন শাখা। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য, মল ইত্যাদি অপসারণ এবং বিশুদ্ধকরণ করা নিয়ে আলোচনা করা হয় এই শাখাতে।
****আরবান এবং কম্যিনিটা প্লানিং****: নগরায়ণ এবং শহর পরিকল্পনা করা হয় মুলত একটি গোষ্ঠি নিয়ে কাজ করা। একটি গোষ্ঠি বা জোট এ কি কি লাগতে পারে এবং কিভাবে লাগাতে হবে তা নিয়ে গবেষণা করা হয় এই শাখাতে
বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্কোপ
অনেকের ধারনা এই বিষয় পড়লে ঘুষ খেতে হয় কিংবা এই প্রকৌশলীদের বেতন নাই। কিন্তু ভাল মন্দ সম্পূর্ণ নিজের কাছে। কেউ যদি দুর্নীতি করতে চায়, যে কোন জায়গা থেকেই তা করতে পারে। ভাল থাকতে চাইলে যে কোন জায়গাতেই ভাল থাকা সম্ভব। আর বেতনের কথা বলা যায় skill থাকলে এই বিষয়ে যত উপরে যাওয়া যায়, অন্য কোন বিষয়ে তা সম্ভব না, তা দেশেই হক আর বিদেশেই হোক।আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর পর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দের গড় বেতন সবচেয়ে বেশি। তবে তার মানে এই নয় যে সবাই high salary job পাবে, এজন্য সেই পর্যায়ের skill develop করতে হবে। এটা শুধু পুরকৌশল নয়, সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সরকারী জব, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেঃ
- পানি উন্নয়ন বোর্ড
- সড়ক ও জনপদ বিভাগ
- এলজিইডি
- বাংলাদেশ রেলওয়ে
- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ
- সিটি করপোরেশন
- পৌরসভা
- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
- সেনাবাহিনী
- মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস
- ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন
- বিভিন্ন বন্দর
- ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন
- স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
- ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড
- আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লি.
- ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিঃ
- ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.
- বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড
- পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি লিমিটেড
- পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিঃ
- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
- বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
- শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর
- মৎস্য অধিদপ্তর
- ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং
শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষন:
- সরকারী ইউনিভার্সিটি
- সরকারী পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট
- সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ
- টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার
- ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
- (আরো থাকতে পারে)
বেসরকারী_জব:
- Real estate company
- ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম
- কন্সট্রাকশন ফার্ম
- পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন multinational company
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
কোথায় পড়বেন ?
বাংলাদেশের প্রায় সব প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।
- ১.ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(ডুয়েট )
- ২.বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
- ৩. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
- ৪. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
- ৫. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
- ৬.শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট)
- ৭.মিলিটারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MIST) (পাবলিক নিয়ে বেশী কিছু বলার নাই কারন –এখানে আপনার চুস এর অপশন টা নাই )
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে উল্লেখ্য ১০ টি
- ১. আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয়: শিক্ষাব্যাবস্থা- ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্যে প্রাইভেট এর মধ্যে সবার আগেই আসে আহছানউল্লাহ নাম । মোটামুটি কম খরচে মানসম্মত শিক্ষাব্যাবস্থা দিচ্ছে আহছানউল্লাহ । ক্যাম্পাস – ৪ বছর একটা ইউনিভার্সিটি তে পড়বেন তাই কোথায় পড়ছেন সেটা বড় একটা ফ্যাক্টর। ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন,ক্যাম্পাসের মান কেমন এসব ইম্পরটেন্ট । আর সেক্ষেত্রে আপনি অনায়সে আহছানউল্লাহ চুস করতে পারেন ,কারন রয়েছে সুন্দর সাবলীল ক্যাম্পাস ও যথেস্ঠ ল্যাব ফ্যাসিলিটি. মেম্বারশীপ – IEB লিস্টেড (যেটা সিভিলের জন্যে ইম্পরটেন্ট)
- ২. ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক : শিক্ষাব্যাবস্থা- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্যে প্রাইভেট এর মধ্যে UAP কে এগিয়ে রাখতে পারেন । কম খরচে মানসম্মত শিক্ষাব্যাবস্থা দিচ্ছে UAP । অসাধারন সব ফ্যাকাল্টির জন্যে UAP অনেক এগিয়ে । দেশের খ্যাতনামা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা স্যার UAPএর । ক্যাম্পাস – ৪ বছর একটা ইউনিভার্সিটি তে পড়বেন তাই কোথায় পড়ছেন সেটা বড় একটা ফ্যাক্টর। ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন,ক্যাম্পাসের মান কেমন এসব ইম্পরটেন্ট । আর সেক্ষেত্রে আপনি অনায়সে. ক্যাম্পাস – ৪ বছর একটা ইউনিভার্সিটি তে পড়বেন তাই কোথায় পড়ছেন সেটা বড় একটা ফ্যাক্টর। ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন,ক্যাম্পাসের মান কেমন এসব ইম্পরটেন্ট । আর সেক্ষেত্রে আপনি অনায়সে; মেম্বারশীপ – IEB লিস্টেড (যেটা সিভিলের জন্যে ইম্পরটেন্ট)
- ৩. স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি :শিক্ষাব্যাবস্থা- AUST/ UAP এর পরেই Stamford কে রাখতে পারেন । ক্যাম্পাস – ৪ বছর একটা ইউনিভার্সিটি তে পড়বেন তাই কোথায় পড়ছেন সেটা বড় একটা ফ্যাক্টর। ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন,ক্যাম্পাসের মান কেমন এসব ইম্পরটেন্ট । আর সেক্ষেত্রে ল্যাব ফ্যাসিলিটি থাকলেও ঢাকায় পারমানেন্ট ক্যাম্পাস নেই।#মেম্বারশীপ – IEB Listed
- ৪.নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (IEB লিস্টেড না)
- ৫. IUBAT (IEB লিস্টেড না)
- ৬.ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলোজি (IEB লিস্টেড না)
- ৭. ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি (IEB লিস্টেড না)
- ৮. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি(IEB লিস্টেড না)
- ৯. ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি (IEB লিস্টেড না)
- ১০. সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তবে পরিশ্রম,প্যাশিয়ন আর ধৈর্য থাকতে হবে
Thanking you
Engr.Towhid
Co-Founder
DESIGN INTEGRITY
এই লেখাটি শেয়ার করো