১. আমার জীবনে যে সকল বড় বড় ভুল করেছি তার মধ্যে অন্যতম বিশাল মারাত্মক অমার্জনীয় একটি ভুল ছিল ফার্স্ট টাইমে BAU এ পরীক্ষা না দেওয়া...
নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, কেন আমি গতবার এই সুযোগটা হাতছাড়া করলাম !
২. এই দুই বছরে অনেক জায়গায় এক্সাম দিয়েছি, অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছি...
তবে এই এক্সামটা দিয়ে একটা ব্যাপার ধরতে পারলাম...
কর্তব্য পালন আর আন্তরিকতার মাঝে বিরাট একটা তফাৎ আছে...
এইখানের সিনিয়র ভাইয়েরা যা করেছে তা সত্যিই কেও কল্পনাও করেনি...
এই আন্তরিকতা দেখে আমি আসলেই অভ্যস্ত না...
তাই আপনাদের সাথে আমিই খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না...
৩. আমি হলের যে রুমে গতকাল ছিলাম সেখানের একটা ঘটনা বলি,
গতকাল রাত দুইটার মত বাজে..
আমি মাত্র শুয়েছি...
আমার পাশেরই দুইটা ছেলে রাতে কিছু খায়নি...
এমন সময় কোত্থেকে একটা বড় ভাই আসল.
উনি সারাদিন দৌড়ের উপরই ছিলেন,খুবই ক্লান্ত..
তো উনি তার একটা ফ্রেন্ডকে বলছিল,তোর সাইকেলের চাবিটা দে, আমি গিয়ে খাবার নিয়ে আসিতেছি..
ক্যান ইউ ইমাজিন দ্যাট !
আই রিপিট তখন রাত প্রায় ২ টা...
এইটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না যে তারা না খেয়ে কেওই ঘুমাইনি...
৪.এই কয়দিন যখনই ফেবুতে ঢু মারতাম,একজনের পোস্ট একদম সবার আগেই স্ক্রিনে চলে আসত...
একটু স্ক্রল করলে আবারও তার পোস্ট.
আমি উনার নাম মেনশন করতে চাইনা.
কেননা তবে আসলেই উনাকে ছোট করা হয়ে যাবে.
কখনো আমি এই গ্রুপে জানতে চেয়ে কোন কিছু পোস্ট করিনি বা একটা কমেন্টও করিনি.
আমার আসলে দরকার পড়েনি.. যেটা জানার ছিল,তা স্টেপ বাই স্টেপ প্রতিটা পোস্টে পেয়েছি. এমন মনে হত যে তারা আমার মনের সব প্রশ্নেরই আন্সার জানে.
হয়তো তারাও এই টাইমটা ফেইস করে আসছে, তাই জানে কখন কি লাগবে আমাদের.
এই গ্রুপের এডমিন থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র ভাই আপুরা যতটুক পেরেছে তার চেয়েও বেশি হেল্প করেছে, ইভেন এখনো করেই যাচ্ছে.
আজ ফেরার সময় বাসে আমার পাশে একটা ক্যান্ডিডেট বসেছিল...
কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম,কোন হলে উঠলা?
পরিচিত কেও আছে?
ও বলল, " নাহ, গ্রুপের একজন এডমিনকে নক করেছিলাম,উনি ব্যবস্থা করে দিয়েছে, অনেক আদর করেছে ভাই,অনেক.."
ওর চোখ মুখ বলার ভঙ্গী দেখেই বুঝা গেছে ও কতটা তৃপ্তি নিয়ে কথাগুলা বলেছে...
এমন কেও কি আছ যে বলবে ভাইয়েরা আমার সাথে বৈষম্য করেছে,বড় ভাইয়ের খালাত ফুপাত ভাইরে ডান চোখে দেখছে আর আমাকে দেখছে বাম চোখে..
আমাকে আদর করে নাই,হেল্প করে নাই..
থাকলে সাড়া দাও প্লিজ...
৫. পরীক্ষা শেষে হলে ফিরছিলাম,
এমন সময় রাস্তায় তিনজন সিনিয়র ভাই এসে দাড়াল...
-কেমন দিলা এক্সাম ?
- জ্বী মোটামুটি...
- কয়টা দাগায়সো??
- .....
- ব্যাপার না, ক্যাম্পাস ভাল্লাগছে?
- হ্যা ভাই,অনেক সুন্দর...
- ভাইয়াদের ভাল্লাগছে?
- হ্যা ভাই...
- সুন্দরী আপুদের ?
- এ্যা ! ইয়ে,...
- কি ? ভাল্লাগে নাই !!
- না না... ভাল লাগছে... :D
আসলেই ভাল্লাগছে...
আমার এক্সাম রুমে যে কয়জন মেয়ে আসছিল প্রত্যেকের সাথে একজন করে সিনিয়র আপু আসছিল...
একদম দরজার তালা খোলা পর্যন্ত ওয়েট করে তাদের সিটে বসিয়ে দিয়ে গেছে.
পারে নাই রোল নাম্বার লিখে দিয়ে যাইতে.আফসোস !
আমাদের কেমন জানি বাবু বাবু বানায় ফেলছে এই বড় ভাইয়া আপুরা.
জানতে খুব ইচ্ছে করছে এমন কোন বান্দা আছে যে হলে থেকেছে রাতে আর কোন ভাইয়া বা আপু তাকে এক্সাম হলে দিয়ে আসেনি?
৬. মুখে লাভু লাভু বলে ফেনা তুললেও সেটা ভালবাসা হয় না...
যদি না তা মন থেকে আসে....
আপনারা আমাদের হয়তো আলগা পিরিত দেখিয়ে বলে দিতে পারতেন, ডাইনে গিয়ে বামে গিয়ে সোজা গেলেই হল পেয়ে যাবা ,ভাল করে এক্সাম দিও, ওকে ভাইয়া?
কিন্তু আপনারা সেটা করেননি, আপনারা জাস্ট 'করে' দেখিয়েছেন.
কিভাবে মন থেকে কিছু করতে হয়.
হয়তো আবার দেখা হবে, হয়তো না, দরকার ছিল না এতটা ভালবাসার, মনে এতটা জায়গা করে নেওয়ার..
৭. যে ফ্রেন্ডের আন্ডারে উঠেছিলাম সেও এইবার সেকেন্ড টাইম দিয়েছে, এই সাব্জেক্ট তার ভাল লাগছে না তাই..
মজার ব্যাপার হল তার বিছানাও আমার মত অতিথিরা দখল করে নাক ডেকে ঘুমাইছে.
আর সে সারারাত জেগে আজকে আমাদের সাথে এক্সাম দিয়েছে.
সে এইখানে এক বছর থেকে শিখে গিয়েছে কিভাবে হাসিমুখে সব কষ্ট একপাশে রেখে অন্যের জন্য ভাল কিছু করা যায়.
৮. আমার এই লেখা দিয়ে হয়তো আমার আবেগ, আমার ভাললাগা, আমার অনুভূতি সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারব না, তবে কৃতজ্ঞতাটুকু হয়তো আদায় করতে পারব..
এইটুকও তারা আমাদের থেকে আশা করে না..তারা বিনিময়ের জন্য যে কিছু করে নি.
৯. আমি আসলেই ভাগ্যবান যে আমি এইখানে আসতে পেরেছি, দেখতে পেরেছি ,শিখতে পেরেছি অনেক কিছুই.
হয়তো যারা চান্স পাবে তারাও আগামীতে এই ধারাটা বজায় রাখবে...
যেন এক্সাম এর পর, আমার মত অতি তুচ্ছ কেও তার ভাললাগা এইভাবে প্রকাশ করে...
অবশেষে..
"ক্যাম্পাসটা বার পাঁচ শূন্য একরের হলেও, আপনাদের আত্মাটা এক বাই শূন্য একরের..."
Tanvir Sahriar
