Chemical Engineering, KUET


কেমিক্যাল মানেই কেমিষ্ট্রি আর রি-অ্যাকশন মুখস্থ করা,সত্যিই কি তাই?

বেশিরভাগ মানুষ একজন কেমিকৌশলীর সাথে একজন কেমিষ্টকে গুলিয়ে ফেলে। অনেকেই ভাবে কেমিক্যালে পড়া মানেই কেমিষ্ট্রি পড়া আর বই ভর্তি কেমিষ্ট্রির বিক্রিয়া মুখস্থ করা,যা সম্পূর্ণই ভুল একটি ধারণা।বিশ্বাস করো আর না করো,লে-২/টা-১ পর্যন্ত আমাকে একটিও নতুন বিক্রিয়া শিখতে হয় নি !

এই একটি ছবিই কিন্তু সব বলে দিচ্ছে,কেমিকৌশলে বিক্রিয়া মুখস্থ করতে হয় না !!
যারা পদার্থবিজ্ঞানে ভালো তাদেরও কেমিকৌশল পড়তে আসা উচিত, কারণ কেমিকৌশলে physical chemistry শেখানো হয়,যেটা পড়তে কোন বিক্রিয়া মুখস্থ করা লাগে না !! কাজেই বিক্রিয়া মুখস্থ করার কোন ভয় নেই, বরং কেমিকৌশলে পড়লে তোমরা জানতে পারবে রসায়নের বিক্রিয়া মুখস্থ করার বাইরেও এ দুনিয়ার raw material গুলোকে ব্যবহার উপযোগী করার অসাধারণ একটি জগত আছে।

# তাহলে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আর কেমিষ্টের মধ্যে পার্থক্যটাই বা কি?

একজন কেমিষ্টের তুলনায় একজন কেমিকৌশলী অনেক গুণ বেশি স্কিলড। একজন কেমিষ্ট কেবলমাত্র ল্যাবরেটরি স্কেলে কাজ করতে জানেন। বাতাসের হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া তৈরি হয় আর এই অ্যামোনিয়াই ইউরিয়া সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। একজন কেমিষ্টকে এক টেষ্টটিউব ভর্তি অ্যামোনিয়া তৈরি করতে বললে তিনি তা পারবেন,কিন্তু তাকে যদি বলা হয় প্রতিদিন ১০০০০০ টন ইউরিয়া তৈরি করতে তিনি তা পারবেন না ! আর এখানেই কেমিকৌশলীর যাদু। একজন কেমিকৌশলী ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল/কমার্শিয়াল স্কেলে কাজ করতে জানেন। প্রতিদিন ১০০০০০ টন ইউরিয়া তৈরি করার জন্য রি-অ্যাক্টরের আকার/প্রয়োজনীয় খরচ হিসেব করা,এই উৎপাদন প্রক্রিয়ার ডিজাইন করা-সকিছুই একজন কেমিকৌশলী পারবেন। কিন্তু একজন কেমিষ্ট ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল/কমার্শিয়াল স্কেলে কাজ করায় মোটেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন।

# কেমিকৌশলের field টা কোথায়?

যে কোন ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে (যেখানে কোন একটি chemical process involved) কেমিকৌশল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কেমিকৌশলের মূল কাজ হল একাধিক raw material থেকে এক/একাধিক process এর মাধ্যমে একটি ব্যবহার-উপযোগী ও প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট তৈরি করা। এজন্য কেমিকৌশলীদের chemical engineer না বলে বরং process engineer বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। বিশ্বের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে chemical engineering নামটি পরিবর্তন করে process engineering করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কেমিকৌশলের field অনেক বেশি diversified। এতটাই diversified যে আমরা বলি chemical engineering is the branch of engineering where engineering is versatile। যেকোন কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রি, সার কারখানা, ওষুধ কোম্পানি, পেট্রোলিয়াম sector সহ আরো অনেক sector কেমিকৌশলীরা কাজ করে থাকেন।

# কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা কেমন? এই field এ job sector টাই বা কেমন?

দেশেও বিদেশে কেমিকৌশলীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখে জানতে পারবে, salary-র দিক থেকে কেমিকৌশলীরা third highest pay-range লাভ করে।

তাছাড়া একজন কেমিকৌশলী আন্ডারগ্র্যাড/পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশনে petroleum engineering কে major হিসেবে নিতে পারে, যা পৃথিবীর highest paid engineering branch। এছাড়া কেমিকৌশলে পড়ে environmental engineering এ study করার সুযোগ আছে।

Higher studies এর ক্ষেত্রে chemical engineering এ funding অন্যান্য engineering ডিপার্টমেন্টের তুলনায় বেশি ও সহজলভ্য।

দেশে একজন কেমিকৌশলী KAFCO, UNILEVER, Chevron, Nestle, BCIC-র সার কারখানা গুলো কিংবা Renata, Beximco-র মতো ওষুধ কোম্পানিতে নিজেদের career develop করতে পারে।

যারা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী/চাকরি করতে আগ্রহী তাদের বলছি, Chemical Engineering is the highest paid job at any level among the engineering jobs all over the world !!

# কেমিকৌশলীরা কেন কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে?

প্রকৃতপক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে- সীমিত সম্পদ এবং সময়ের সর্বোচ্চ ব্যাবহারের মাধ্যমে সর্বোত্তম মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন কিংবা সুদুরপ্রসারী উৎপাদন পরিকল্পনা করা। সোজা কথায় যেটার নাম Optimization. সকল প্রকৌশলীকেই এই কাজটিই করতে হয়। কিন্তু একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারকে যেহেতু সরাসরি একটি সম্পুর্ন প্রসেস/উৎপাদন প্রক্রিয়া ডিজাইন বা তদারক করতে হয়, সেহেতু তাকে মোটামুটি সবধরনের বিষয়ই আয়ত্তে রাখতে হয়।

কুয়েটের কেমিকৌশলে এজন্য মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিকাল, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও মেটালার্জির প্রাথমিক ধারনা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজম্যান্ট কিংবা পরিসংখ্যান-অর্থনীতিও পড়ানো হবে ।

আর কেমিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং এর অনন্য কোর সাব্জেক্টগুলো বাদ দিলে, অন্যান্য ডিপার্ট্মেন্টের থেকে কেমিকৌশলে মোট ৯ ক্রেডিট(২টা থিউরী, ২টা ল্যাব) কেমিস্ট্রি বেশী পরতে হয়, যা Environmental Engineering কিংবা Chemical Process Industry তে বাকীদের থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে রাখে। এছাড়া আন্ডারগ্র্যাড শেষবর্ষে এসে বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারীং/ ন্যাচারাল গ্যাস ইঞ্জিনীয়ারিং/ পেট্রোলিয়াম ইঞ্জীনিয়ারিং এ মেজর নেয়ার সুযোগ থাকে বুয়েটে। কুয়েটে আসা একজন নবীন শিক্ষার্থী হয়তো এসব নন-ডিপার্টমেন্টাল বিষয় পড়তে অনীহা দেখাতে পারে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এইসব কারনেই কেমিকৌশল স্পষ্টতই এগিয়ে থাকে।

# KUET কেমিকৌশল ডিপার্টমেন্ট টা কেমন হবে?

তুমি দুনিয়ার যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি হও না কেন,সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ ডিপার্টমেন্ট টা কেমন,এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়/ডিপার্টমেন্ট যতই ভালো হোক,তুমি যদি খাপ খাওয়াতে না পারো তখন কিন্তু সমস্যা।

মেকানিক্যাল ফ্যাকাল্টি তোমাদের সিনিয়র!! কুয়েটে সব ডিপার্টমেন্টের মধ্যে ফ্যাকাল্টি-কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টেই সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্কটা সবচেয়ে বেশি আন্তরিক হবে আশা করা যায়।

এতটাই আন্তরিক যে,আমরা কখনোই বলতে পারি না আমাদের ডিপার্টমেন্টে 1টা ব্যাচ আছে/হবে,আমরা বলি আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা পরিবার আছে আর আমরা সবাই সে পরিবারের সদস্য ! শুধু তাই নয়, নবীনদেরকে স্বাগত জানাতে ও তাদের যে কোন সমস্যায় তাদেরকে সহযোগিতা করতে senior রা reception আয়োজন করে থাকে ।

আর যেহেতু তোমরা কুয়েটে ভর্তি হচ্ছ, সুতরাং কুয়েটের সেশনজটের না থাকার কথা তোমাদের অজানা থাকার কথা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি টার্ম ৬ মাসে শেষ হয়।

শেষকথা

অনেক সাধনার পর কুয়েটে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছ,তাই তোমাদের অভিনন্দন। কিন্তু ভর্তি হবার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা,কুয়েট একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং-ই পড়ানো হয়,অন্য কিছু না। তাই একজন প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন নিয়ে তারপর যদি কুয়েটে ভর্তি হও তাহলে সবচেয়ে ভালো।

আর যখন তুমি কুয়েটে ভর্তি হচ্ছ তখন কিন্তু তোমার উপর দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেল ! তুমি যদি ভাব তুমি বাবার আয়ে কুয়েটে পড়ছ তাহলে কিন্তু ভুল !!!

গরিব কৃষক আয়ে,অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত গার্মেন্টস কর্মীর আয়ে আমরা সবাই কুয়েটে পড়ি। আমরা কুয়েটে যে খরচ দেই সেটি কিন্তু ইঞ্জিন্যারিং পড়ার প্রকৃত খরচ না,প্রকৃত খরচ হল তুমি একই বিষয় পড়তে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যে খরচটি দিতে সেটি।

আর তোমার এই খরচটি কমিয়ে আনতে দিনভর কষ্টের পর একজন কৃষককে পায়ে হেঁটে ট্যাক্স দিয়ে আসতে হয়,একজন গার্মেন্টস কর্মীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওভারটাইম করতে হয় !

কুয়েটে প্রতিটি বিভাগেই তোমার স্বপ্নপূরণের সুযোগ রয়েছে। তুমি তোমার পচ্ছন্দমত যে কোন বিভাগ বেছে নিতে পারো। তুমি যেন তোমার পড়াশোনা টা উপভোগ কর সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

KUET 2K18 ব্যাচকে ইঞ্জিনিয়ারিং জগতে স্বাগতম !!

KUET Review

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.