MSE

বলা হয়ে থাকে "প্রকৌশলীগণ যুগান্তর ঘটিয়ে থাকেন"। তেমনি ভাবে ব্রোঞ্জ যুগ পেড়িয়ে লৌহ যুগ হয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছতে কাজ করেছেন একদল প্রকৌশলী।বস্তু বিজ্ঞানের প্রতি অপরিসীম আগ্রহ এবং তার উন্নয়নের প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আজকের এই উন্নত অবস্থার পেছনের গল্প গুলো তাঁদের হাতেই লেখা।আর তাঁদের সেই গর্বিত সত্ত্বার উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান পৃথিবীকে আরও একটি ধাপ পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় কাজ করছে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিনিধি রা। টেকনোলজির এই যুগটা সম্পূর্ণ ভাবেই তোমার হাতের মুঠোয় থাকতে পারে,যদি তোমার গন্তব্যের দিশা হয় ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং। তোমার আগ্রহের ক্ষেত্র যদি হয় এনার্জী এন্ড সোলার সেল,বায়োম্যাটেরিয়ালস,বায়োকম্পেটিবিলিটি কিংবা ন্যানোমেডিসিন তাহলে নির্দ্বিধায় তুমি চলে আসতে পারো এখানে।এখানে তোমার কাজের ক্ষেত্র জুড়ে বিচরণ করবে ইকোফ্রেন্ডলি ম্যাটেরিয়ালস,ন্যানোবায়োমিমিক্রি,গ্রাফিনের মতো অত্যাশ্চর্য্য সব বিষয় বস্তু।সেমিকন্ডাক্টর,ন্যানো ওয়্যার,ন্যানো কম্পোসিট কিংবা বস্তুর যে কোনো ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং তার উৎকর্ষ সাধনের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশীদার হতে এর চাইতে ভালো প্লাটফর্ম দ্বিতীয়টি পাবে না।কল্পকাহিনীর সেই ইনভিজিবল কোট যে বাস্তবিক ভাবেই তৈরি সম্ভব,যার জন্য প্রয়োজন মেটাম্যাটেরিয়াল।পরিচিত মৌল কার্বনের এমন কিছু বিন্যাস আজও করা হচ্ছে এবং করা হবে যেটা বদলে দিবে অনাগত আধুনিক বিশ্বের গতিবিধি।তোমার দখলদারিত্বে ম্যাটেরিয়াল থাকছে,তোমার হাত ধরেই পরিবর্তন হবে গতানুগতিক ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা মেকানিক্স এর বিভিন্ন যন্ত্রের মূল উপাদান ধারণার।রিসার্চের অপরিসীম এক পরিসরের জগতের প্রবেশদ্বারে দাড়িয়ে থেকে এক নতুন বিশ্বের হাতছানি তোমাকে হতাশ করবে না,এতটুকু বলে রাখা যায়। প্রচলিত এবং প্রয়োজনীয় যে কোনো ধরনের উপাদানের উৎকর্ষ সাধন এবং নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন ঘটানোর, উপর্যুপরি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের বিলুপ্তি করণের কাজ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকি।কার্বনের বিরুপ প্রভাব দূরীকরণ এবং দূষণমুক্ত পৃথিবী গঠনের দৃপ্ত চ্যালেন্জে আমাদের কর্মপরিসর দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে,এবং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থান বেশ সুবিধাজনক।রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে উক্ত ডিপার্টমেন্ট টি চালু করা হয়।এছাড়াও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উক্ত ডিসিপ্লিনের কার্যক্রম চালু আছে। এছাড়া ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এবছরের প্রেক্ষাপটে সমগ্র বাংলাদেশ হতে ২৪০ জন শিক্ষার্থী,চার বছর পর এই বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করবে।তাই বলাই যাচ্ছে,চাকুরী,গবেষণা কিংবা স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে অতি প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে না কাউকে।একটি দেশের শিল্প মূলত ধাতু, সিরামিক, পলিমার, সেমিকন্ডাক্টার, কম্পোজিট এই পাঁচ ধরনের পদার্থের উন্নয়নের উপর নির্ভর করে। আর এসব পদার্থের ম্যাক্রো, মাইক্রো, এমনকি ন্যানো লেভেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উন্নতি সাধনেই এই ডিপার্টমেন্ট প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

একাডেমিক কোর্স সমূহঃ
Level 1 & 2: বেশ কিছু নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স এর সাথে বেসিক কিছু ডিপার্টমেন্টাল কোর্স থাকবে। 
1. Math- Calculus, Vector, Matrices, Mechanics, Statistics, Probability etc.; 
2. Physics – Basic Physics, Electronics, Optics, Waves, Solid state physics etc.; 
3. Chemistry- Inorganic & Organic;
4. eee,cse এর ব্যাসিক কিছু কোর্স,অটোক্যাড, মেকানিক্যাল ড্রয়িং
এছাড়া ইংরেজী, একাউন্টিং/ইকোনমিক্স ও পড়ানো হয়। অন্যদিকে ডিপার্টমেন্টাল কোর্স আর ম্যাটেরিয়াল টেস্টিং, ড্রয়িং-ডিজাইন রিলেটেড কিছু সেশনাল থাকে যা পরবর্তী লেভেলগুলোর বেসিক তৈরী করবে।

Level 3 & 4: এখানে প্রায় সব ডিপার্টমেন্টাল কোর্সের সাথে গুটিকয়েক প্রফেশনাল লার্নিং এর জন্য নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স। পূর্বে উল্লেখিত পাঁচ ধরনের পদার্থের নিষ্কাশন, ফরমেশন, কম্বিনেশন থেকে শুরু করে টেস্টিং, প্রপার্টি, এপলিকেশন এবং এর সুক্ষাতিসূক্ষ উন্নয়ন এখানে পড়ানো হবে। কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন কোর্স হলোঃ Crystal Defects, Physical Properties of Materials, Foundry Engineering, Metal Joining, Materials Characterization, Heat Treatment, Material Selection, Metal Working Process & Composite, Surface Engineering of Materials, Corrosion and Degradation of Materials, Refractories and Furnaces, Iron and Steel Making, Polymer Science and Engineering রিলেটেড কোর্স। এছাড়া নিতে হবে ফাইনাল ইয়ার থিসিস, যাতে কোন একটি নির্দিষ্ট টপিকের উপর রিসার্চ করে এক্সপেক্টেড রেজাল্ট বের করে আনতে হয়। টপিকটি সাধারনত থিসিস সুপারভাইজারের সাথে আলোচনা করে নিতে হয়। যাদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী তাদের এই দুইটি লেভেল বিশেষ গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।

চাকুরী ক্ষেত্রঃ
* একজন ম্যাটেরিয়াল ইন্জিনিয়ারের প্রধান কর্মক্ষেত্র হচ্ছে গবেষণাগার।মিলি মাইক্রো ন্যানো পর্যায়ের পর্যন্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণ এবং মানোন্নয়নের মাধ্যমেই কর্মপরিসরে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ থাকছে।

* সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত/সশস্ত্রবাহিনীতে চাকুরি: BCSIR, Atomic Energy Commission, BITAC, PDB, Bangladesh Machine Tools Factory, Bangladesh Ordinance Factory(সশস্ত্র ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বন্দুক, কার্তুজ, গ্রেনেড প্রস্তুতকারক), Bangladesh Army EME Corps, Bangladesh Air Force Engineering Corps.

*দেশে চাকুরীর ক্ষেত্র: স্টিল শিল্প, সিরামিক শিল্প, খাদ্য প্যাকেজিং শিল্প, গ্যাস ক্ষেত্র, পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ওয়ালটন গ্রুপের মতো উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদন শিল্প

*বিদেশে গবেষণা ও চাকুরির ক্ষেত্র: নভোযান গবেষণা প্রতিষ্ঠান , সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি , পলিমার ইন্ডাস্ট্রি ,অটোমোটিভ বায়োমেডিক্যাল,ন্যানোটেকনোলজিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি,মাইনিং ইন্ডাস্ট্রি এবং বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল তৈরির ইন্ডাস্ট্রি।

গবেষণার সুযোগঃ
গবেষণার বিস্তর পরিসর থেকে অংশবিশেষ এর আলোচনা করা হলো;
ন্যানোটেকনোলজি : পরবর্তী ১০-১৫ বছরের মধ্যেই আমরা খুব সম্ভবত সিলিকন এজ থেকে ন্যানো এজে প্রবেশ করবো। ন্যানো নিয়ে তো আশা করি আমরা সবাই ই জানি। ন্যানো টেকনোলজির উন্নতির ফলে ইলেক্ট্রনিক প্রপার্টিগুলো, অপ্টিওইলেক্ট্রিক এবং ফিজিক্যাল প্রপার্টিসগুলোর ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে।

মাল্টিফাংশনাল ম্যাটেরিয়াল :নরমাল যে ম্যাটেরিয়ালস যেমন মেটাল, পলিমার অথবা সিরামিক গুলো দেখি এগুলোর মোডিফাইড ভার্সন ই হলো মাল্টিফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালস। এই মাল্টিফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালিস গুলো এনভায়রনমেন্ট চ্যাঞ্জের সাথে সাথে নিজের প্রপার্টিসগুলো ও চ্যাঞ্জ করতে পারে। এক্সাম্পল হিসেবে আমরা শেইপ মেমোরি এলয়, পাইজোইলেক্ট্রিক ম্যাটেরিয়ালস, সুপার কন্ডাক্টিভ ম্যাটেরিয়ালস গুলোর নাম নিতে পারি।

কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস : এটা তো ম্যাটেরিয়ালস এর ই একটা বেসিক টাইপ। যেখানে তুমি কোনো একাধিক টাইপের কোনো ম্যাটেরিয়ালের কম্বাইন ঘটিয়ে নতুন একটা ম্যাটেরিয়াল তৈরী করতে পারো যেখানে ইউজড ডিফারেন্ট ম্যাটেরিয়াগুলোর বেস্ট ক্যারাক্টারিস্টিকসের সমন্বয় ঘটবে। যেমন: কার্বন ফাইবার পলিমার যেখানে একইসাথে পলিমার আর গ্লাস এর প্রপার্টিস গুলোর সমন্বয় ঘটেছে।

এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং : নতুন এমন কিছু ম্যাটেরিয়ালস এর উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে যা খুব অল্প এনার্জি কন্সাম্পসনে হাইয়ার এফিসিয়েন্সি দেখাবে।

ফিজিক্যাল মেটালার্জি:এই ফিল্ডের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ই মাইক্রোস্ট্রাকচার এর প্রপার কন্ট্রোল এর মাধ্যমে ম্যাটেরিয়াল এর প্রপার্টিসগুলো উন্নত করার চেষ্টায় রত আছে।

এছাড়া গবেষণার আরো কয়েকটা স্কোপ হলো :নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়ালস,পাউডার ম্যাটালার্জি,থিন ফিল্মস,মেটালিক গ্লাস ইত্যাদি।

আর এত সব রিসার্চের কাজ চালাতে বিভিন্ন কোম্পানির আর এন্ড ডি পদে,প্রয়োজন পড়ে একজন ম্যাটেরিয়াল ইন্জিনিয়ারের,সুযোগ থাকছে স্কলারশিপ এর।
------------

ইন্জিনিয়ারিং লাইফে প্যাশনেট নলেজ সিকার আর রিসার্চের মত কাজে আগ্রহী, নতুন একটা কিছু উদ্ভাবনের ইচ্ছে যদি হয় মজ্জাগত তাহলে তোমাকে স্বাগত জানাই,ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ।

Moderated by:
Maruf Hasan Soujanya(MSE'18, RUET)
Written by:
Faiaz Ahmed Arnob(MSE'17, RUET)
Logo credit:
Sk Sartaz Ahmed(MSE'17, RUET)
Special thanks to:
Arnika Tabassum Arni(MSE'16, RUET)
Eqramuzzaman Nabil(MSE'17, RUET)
Saif Hasan Sifat(MSE'17, RUET)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.