রসাত্মক বক্তব্য এড়িয়ে এবার তিক্ত সত্য বললেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য!


অনেক বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গেলাম। সাধারণত গরমকালে এই অনুষ্ঠান হয় বলে এইরকম গরম কাপড় পরে ওখানে যাওয়া যেন টর্চার সেলে যাওয়া। এইবার যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো সমাবর্তন বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল বিজয়ী জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাকি তাজাকি। দ্বিতীয় কারণ হলো অনুষ্ঠানটি ডিসেম্বরে হওয়ায় গরম লাগেনি। 

মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেন্সেলর আব্দুল হামিদের বক্তব্য শুনার পর মনে হয়েছে এইবার সমাবর্তনে আসাটা স্বার্থক হয়েছে। না আসলে বরং পস্তাতে হতো। রাষ্ট্রপতি কয়েকটি তেতো কথা বলেছেন যা উপস্থিত অনেককেই হয়ত আহত করেছে কিন্তু কথাগুলো যৌক্তিক এবং সময়োযোগী। পপ্রথমত যেই কথাটি উনি অত্যন্ত শক্তভাবে বলেছেন সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম নিয়ে। 

উনি বলেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন যেন দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় বলেছেন এটি চলতে পারেনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধরণের ছাত্রছাত্রী থাকতে পারেনা। সত্যিই তাই। শিক্ষকরা যদি দিনেরাতে কেবল ক্লাস নিতে থাকেন তাহলে গবেষণা করবেন কখন? তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন শিক্ষকদের মনযোগ এখন টাকা কামানোর দিকে যেটা কাম্য নয়। বিসনেস ফ্যাকাল্টি বিসনেসের নামে শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় না সকল বিশ্ববিদ্যালয়কেই ডুবিয়েছে। তারা এবং তাদের ফ্যাকাল্টি হয়ত রিস্টপুস্ট হয়েছে কিন্তু একই সাথে তারা বৈষম্যও সৃষ্টি করেছে। 

দ্বিতীয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উনি আলোকপাত করেছেন সেটি হলো ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। তিনি বলেছেন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা শুনেছেন যা উনার ভালো লাগেনি। অনেক বছর পর নির্বাচন হয়েছে ভালো কথা কিন্তু এইরকম নির্বাচন কাম্য নয়। তিনি বলেছেন ভবিষ্যতে যেন ভালো নির্বাচন হয়। তিনি আরো বলেছেন ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছে তাদের সম্মন্ধে নানা কথা উনি শুনেন যা উনার কাছে ভালো লাগে না। নির্বাচিত সংসদ ছাত্রদের ভালোমন্দ নিয়ে কিছু করে না এটাও উনার কাছে ভালো লাগে না। 

এছাড়া উনি কারো নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম না উল্লেখ করে বলেছেন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্মন্ধে নানাকথা শুনেন যা কাম্য নয় এবং ভালো লাগে না। উপাচার্যরা প্রতিষ্ঠানের নেতা। তাদের কাজ গবেষণা ও শিক্ষা কাজকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা কিন্তু অনেকেই সেটা করে না। এতো উনার ভালো লাগে না। 

আজকের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ হাস্যরসাত্বক (witty) বক্তব্য রাখেননি। উনার প্রতিটি কথাই ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ উনার মেসেজ সিরিয়াসলি নিবেন এবং তদনুসারে পদক্ষেপ নিবেন যেন আগামী সমাবর্তনেও রাষ্ট্রপতিকে একই কথা বলতে না হয়। এগুলো করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান অবশ্যই বাড়বে বলে আমি মনে করি।

এতটা স্পষ্ট করে এর আগে কেউ এত তেতো কথা বলেনি। ধন্যবাদ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় আচার্য।

© অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.