.
.
৯১ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস, অথচ দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের অজস্র শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস টি কে নিজের করে পেতে চায়। স্বপ্ন প্রত্যেকেরই আকাশছোঁয়া। প্রতিদিন জন্মে ওঠা কত-কত স্বপ্নের আঁকর হয়ে বেড়ে ওঠা এই একানব্বই একর দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য।
.
সেই ছোট থেকে ক্যাম্পাস টির অংশ হতে চাওয়া অনেকেই সেই সে-স্বপ্ন অর্জনের প্রায় দ্বারপ্রান্ত তে দাঁড়িয়ে।অংশগ্রহণ করা প্রতি দশ জন থেকে একজন চান্স পাবে- হিসেব টা এমনই। সত্যি বলতে প্রতিযোগিতা বেশ কম। সোজা মনে হচ্ছে, কিন্তু, বুয়েটে সেরাদের সেরা হবার এই ভর্তিযুদ্ধে প্রত্যেকেই বুয়েটে পা রাখার যোগ্যতা রাখে- আসন সংখ্যা টাই বিট্রে করে আর কি! তাই হতে হবে সবদিক দিয়ে তুখোড়।
.
গতবারের সার্কুলার নতুন করে বলতে চাচ্ছি না। কেননা, এবার পরীক্ষার রেজাল্ট তুলনামূলকভাবে খারাপ। আর, বুয়েট তার আসন সংখ্যার দশ গুণ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারে এমন রেজাল্ট ই চাইবে। নম্বর চাইবে কি না, এটাও দেখার অপেক্ষায় আছি। সার্কুলার দেখার আগে এ ব্যাপার নিয়ে আমার কিছু বলা বোকামি।
.
কিন্তু যা জানাতে পারি, সেগুলো নিয়েই লিখছি-
.
*এসএসসি তে ৪.০০ থাকতে হবে কমপক্ষে।
*এইচএসসি তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে যথাক্রমে, গণিত, পদার্থ,রসায়ন, ইংরেজি। তাই যদি ইংরেজি তে এ+ মিস আর পদার্থ তে এ+ মিস করা দু'জন শিক্ষার্থীর একজন কে বাছাই করতে বলা হয়, বুয়েট ইংরেজি তে এ+ মিস শিক্ষার্থী কে বেছে নেবে।
*মোট পরীক্ষা হবে ৬০০ নম্বরের। গণিত ২০০, পদার্থ-২০০, রসায়ন-২০০। পরীক্ষা হবে লিখিত। ২০ টি করে প্রশ্ন থাকবে প্রতিটি অংশে, যার মান ১০ করে।
*যারা আর্কিটেকচার সহ আবেদন করবে, তাদের এই ৬০০ নম্বর ব্যতীত ৪০০ নম্বরের "মুক্তহস্তে অঙ্কন" পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
*দেখা গেল, কেউ ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু লিখিত ৬০০ ভাল দিয়েছে, অঙ্কন খারাপ করেছে। সে ক্ষেত্রে সে আর্কিটেকচার ব্যতীত অন্য বিষয় গুলোর জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, ৬০০ নম্বরের পরীক্ষাটি সবার জন্য সমান এবং তা সমন্বয় করে রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। তাই, আর্কিটেকচার এর পরীক্ষা দিলে অন্য বিষয় পাবে কি না, এমন অমূলক প্রশ্ন মুছে ফেলো মন থেকে।
.
বিভাগসমূহঃ
৫টি ফ্যাকাল্টির অধীনে মোট ১২ টি বিভাগ রয়েছে বুয়েটে। কিছু ধারণা দেবার চেষ্টা করি।
.
*** ফ্যাকাল্টি অফ ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
১) EEE
পুরো নাম- ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৯৫
পরিচিতি- বিশ্বব্যাপী সেরা ও অভিজাত বিষয়। যদি ম্যাথ, ফিজিক্স ভাল লাগে, পদার্থ ২য় পত্রের বিদ্যুতের বিষয় গুলো যদি ইন্টারেস্টিং লাগে-তবে EEE তে স্বাগতম। EEE এর ক্ষেত্র এত বিস্তৃত যে, সামান্য কথায় বলা সম্ভব না।power, electronics, computer-প্রধান তিনটি সাব পোরশনের নাম। আর চাকরির বাজার?চাকরির বাজারে EEE ইঞ্জিনিয়ার দের চাহিদা কখনোই কমবে না।
.
২)CSE
পুরো নামঃ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যাঃ ১২০
পরিচিতি- বড় একটি সমস্যা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী CSE নাম শুনেই ভর্তি হতে চায়। কি পড়ানো হয় সেখানে? প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে কয় জন? একটা ডেক্সটপ থাকলেই কি আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়?
CSE তে শেখানো হয় প্রোগ্রামিং (সি ল্যাংগুয়েজ,জাভা), এলগরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার, ডাটাবেস, ম্যাথ, অপারেটিং সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স,কম্পাইলার, গ্রাফিক্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্কিং এসব বিষয়।
.
৩)BME
পুরো নামঃ বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৩০
পরিচিতি- একবারেই নতুন একটি বিষয়। অভিনব বিষয় টি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলের প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। কি পড়ানো হয়? বায়োমেকানিক্স, বায়োইলেক্ট্রিসিটি, বায়োম্যাটারিয়ালস, ইভেন - এনাটমি আর ফিজিওলজিও। বায়োলজি অপছন্দ কর যারা, তারা হয়ত অনাগ্রহী হয়ে পড়েছ। কিন্তু আসলে এখানে বায়োলজি কে গুরুত্ব দেয়া হয় না বরং এটি "এপ্লিকেশন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন লিভিং বেইং"।
.
ফ্যাকাল্টি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
৪)CE
পুরোনাম- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৯৫
পরিচিতি- নির্মাণে নকশা, ব্যবস্থাপনা, গঠন, নির্ধারণ তদারকি, পরিকল্পনা ইত্যাদি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রধান কাজ। তাই কোনো কিছু নির্মাণে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর অনুপস্থিতি অকল্পনীয়। ইন্টারেস্ট আর পরিশ্রম থাকলে সহজেই ভাল করা সম্ভব। এইখানে প্রধানত যেই বিষয় টা পড়ানো হয় তা হল mechanics, এছাড়া ড্রয়িং, designing এর উপর ও ভাল দখল থাকা চাই। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান শাখা চারটি
I. Structural Engineering
II. Transportation Engineering
III. Geotechnical Engineering
IV. Environmental Engineering
.
.
৫) WRE
পুরো নাম- ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা-৩০
.
পরিচিতি- মূলত সিভিলের থেকে আলাদা হয়ে এটি সমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছে। পানি সম্পদ প্রকৌশল পানির ভৌত অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। বন্যা, শহরের-কারখানা-সেচ এর পানি সরবরাহ, নদী ভাঙ্গন রোধ, নদীর শাসন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং ডিজাইন করে থাকে। হাইড্রলিক পাওয়ার, বাধ, খাল, পানিধস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়। সিভিলে যে বেসিক বিষয় গুলো দরকার, তার সবই WREতে অত্যাবশ্যক।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং
৬)Che E
পুরোনামঃ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৬০
.
পরিচিতিঃ রসায়ন ভাল লাগলে নির্দ্বিধায় চলে এসো এই বিভাগটি তে পড়তে। যদিও,রসায়ন আর কেমিকৌশল মোটেও এক বিষয় নয়। কেমিস্ট কাজ করেন ল্যাবে আর কেমিকোশলীদের কাজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো তে। প্রধান কাজগুলো হল –Design, manufacture and operating plants,
Development of new or adopted products।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র আর লাইফ সাইন্স, অর্থাৎ জৈব রসায়ন, অণুপ্রাণবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নকে সাথে নিয়ে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনকভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করে।
.
৭)MME
পুরো নাম- ম্যাটারিয়াল এন্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৫০
.
পরিচিতি- আমি শিওর, অনেকেই বিষয় টি চেনোই না। আজ প্রথম নাম শুনলা! হতেই পারে। এটির বাংলা বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ।সকল বস্তুকে ৫টি প্রধান ভাগ(মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট) করে স্টাডি করে MME। অনেক ডিটেইল বলা যাবে। সেসব নাহয় একদিন সাবজেক্ট রিভিউ করে বলে দেবো।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
৮)ME
পুরো নাম- মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৮০
.
পরিচিতি- পড়ার বিষয়? বলছি-
Applied Mechanics, Fluid Engineering,Heat Transfer,
Tribology,Aerospace & Automobile,Energy Conversion, Fuels & Combustion Technologies,Nuclear Engineering, Power Engineering, Advanced Energy Systems, Solar Engineering, Petroleum Ocean,, Offshore & Arctic Engineering, Environment & Transportation, Noise Control & Acoustics, Rail Transportation, Solid Waste Processing, Engineering & Technology Management, Manufacturing Engineering, Pressure Vessels & Piping, Systems & Design, Fluid Power Systems & Technology, Electrical & Electronic Packaging, Robotics
কি? মাথা ঘুরতেছে? এসব কিছুই পড়ানো হয় মেকা তে। কঠিন মনে হলেও, ইন্টারেস্টিং তো বটেই। আর জব নিয়েও চিন্তা নেই।
মেকাদের ডিমান্ড কখনোই কমবার নয়
.
৯) NAME
পুরো নাম- নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা-৫৫
.
পরিচিতি-বিদেশে এটি পরিচিত Maritime Engineering বা Ocean Engineering বা Offshore Engineering হিসেবে। মূলত জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও এর ক্ষেত্র আরও অনেক বিস্তৃত।
.
১০) IPE
পুরো নামঃ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৩০
.
ম্যানুফেকচারিং ও ম্যানেজমেন্ট - এই দুই বিষয়ের কম্বিনেশন হচ্ছে আই পি ই।এই বিভাগে প্রডাক্ট ডিজাইন,ম্যনুফেকচারিং এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা সহ ইঞ্জিনিয়ারিং এর মৌলিক বিষয় সমূহ পড়ানো হয়ে থাকে।কিন্তু আই পি ই তে ম্যানুফেকচারিং এর পাশাপাশি ম্যানেজম্যন্ট এর প্রতি জোর দেয়া হয় যার ফলে আই পি ই ইঞ্জিনিয়ার রা ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি ম্যনেজম্যন্ট বিষয়ে দক্ষতা লাভ করে।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিটেকচার
.
১১) Architecture
আসন সংখ্যা- ৫৫
.
পরিচিতি- আর্কির শিক্ষার্থীর জন্যে জীবন, প্রকৃতি আর মানুষ হল পড়ার বিষয়। এর সাথে সম্পর্কিত যা যা হতে পারে সবই এখানে পড়ানো হয়। ডিজাইন করা আর তাকে ডেভেলপ করা এটাই মূল কাজ। ডিজাইন যে কোন বিষয় এর হতে পারে। ৫ বছর প্রায় ২০০ ক্রেডিট এর মাঝে ইতিহাস থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিকাল থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনেক কোর্স পড়তে হয়। আবার ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব সাবজেক্ট এর বৈচিত্র যে কাউকে মুগ্ধ করে দেবে।
.
১২) URP
পুরো নামঃ আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং
আসন- ৩০
.
পরিচিতি- নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি মূলত পূরকৌশল, স্থাপত্য বিদ্যা এবং সামাজিক বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ। কি, অদ্ভুত মনে হচ্ছে? আসলে আমাদের দেশে স্থপতিরা স্থাপনার নকশা করে, পুরকৌশলীরা সে স্থাপনা নির্মাণ করে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সে স্থাপনাগুলো কোন নগরের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকা রাখছে কি না বা সে সকল স্থাপনাগুলোর আদৌ কোন দরকার আছে কিনা বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নগরের এবং নাগরিকদের কি কি দরকার সেসবের জন্য URP এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
.
Maruful Anam Rangon
.
৯১ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস, অথচ দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের অজস্র শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস টি কে নিজের করে পেতে চায়। স্বপ্ন প্রত্যেকেরই আকাশছোঁয়া। প্রতিদিন জন্মে ওঠা কত-কত স্বপ্নের আঁকর হয়ে বেড়ে ওঠা এই একানব্বই একর দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য।
.
সেই ছোট থেকে ক্যাম্পাস টির অংশ হতে চাওয়া অনেকেই সেই সে-স্বপ্ন অর্জনের প্রায় দ্বারপ্রান্ত তে দাঁড়িয়ে।অংশগ্রহণ করা প্রতি দশ জন থেকে একজন চান্স পাবে- হিসেব টা এমনই। সত্যি বলতে প্রতিযোগিতা বেশ কম। সোজা মনে হচ্ছে, কিন্তু, বুয়েটে সেরাদের সেরা হবার এই ভর্তিযুদ্ধে প্রত্যেকেই বুয়েটে পা রাখার যোগ্যতা রাখে- আসন সংখ্যা টাই বিট্রে করে আর কি! তাই হতে হবে সবদিক দিয়ে তুখোড়।
.
গতবারের সার্কুলার নতুন করে বলতে চাচ্ছি না। কেননা, এবার পরীক্ষার রেজাল্ট তুলনামূলকভাবে খারাপ। আর, বুয়েট তার আসন সংখ্যার দশ গুণ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারে এমন রেজাল্ট ই চাইবে। নম্বর চাইবে কি না, এটাও দেখার অপেক্ষায় আছি। সার্কুলার দেখার আগে এ ব্যাপার নিয়ে আমার কিছু বলা বোকামি।
.
কিন্তু যা জানাতে পারি, সেগুলো নিয়েই লিখছি-
.
*এসএসসি তে ৪.০০ থাকতে হবে কমপক্ষে।
*এইচএসসি তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে যথাক্রমে, গণিত, পদার্থ,রসায়ন, ইংরেজি। তাই যদি ইংরেজি তে এ+ মিস আর পদার্থ তে এ+ মিস করা দু'জন শিক্ষার্থীর একজন কে বাছাই করতে বলা হয়, বুয়েট ইংরেজি তে এ+ মিস শিক্ষার্থী কে বেছে নেবে।
*মোট পরীক্ষা হবে ৬০০ নম্বরের। গণিত ২০০, পদার্থ-২০০, রসায়ন-২০০। পরীক্ষা হবে লিখিত। ২০ টি করে প্রশ্ন থাকবে প্রতিটি অংশে, যার মান ১০ করে।
*যারা আর্কিটেকচার সহ আবেদন করবে, তাদের এই ৬০০ নম্বর ব্যতীত ৪০০ নম্বরের "মুক্তহস্তে অঙ্কন" পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
*দেখা গেল, কেউ ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু লিখিত ৬০০ ভাল দিয়েছে, অঙ্কন খারাপ করেছে। সে ক্ষেত্রে সে আর্কিটেকচার ব্যতীত অন্য বিষয় গুলোর জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, ৬০০ নম্বরের পরীক্ষাটি সবার জন্য সমান এবং তা সমন্বয় করে রেজাল্ট প্রকাশিত হবে। তাই, আর্কিটেকচার এর পরীক্ষা দিলে অন্য বিষয় পাবে কি না, এমন অমূলক প্রশ্ন মুছে ফেলো মন থেকে।
.
বিভাগসমূহঃ
৫টি ফ্যাকাল্টির অধীনে মোট ১২ টি বিভাগ রয়েছে বুয়েটে। কিছু ধারণা দেবার চেষ্টা করি।
.
*** ফ্যাকাল্টি অফ ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
১) EEE
পুরো নাম- ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৯৫
পরিচিতি- বিশ্বব্যাপী সেরা ও অভিজাত বিষয়। যদি ম্যাথ, ফিজিক্স ভাল লাগে, পদার্থ ২য় পত্রের বিদ্যুতের বিষয় গুলো যদি ইন্টারেস্টিং লাগে-তবে EEE তে স্বাগতম। EEE এর ক্ষেত্র এত বিস্তৃত যে, সামান্য কথায় বলা সম্ভব না।power, electronics, computer-প্রধান তিনটি সাব পোরশনের নাম। আর চাকরির বাজার?চাকরির বাজারে EEE ইঞ্জিনিয়ার দের চাহিদা কখনোই কমবে না।
.
২)CSE
পুরো নামঃ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যাঃ ১২০
পরিচিতি- বড় একটি সমস্যা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী CSE নাম শুনেই ভর্তি হতে চায়। কি পড়ানো হয় সেখানে? প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে কয় জন? একটা ডেক্সটপ থাকলেই কি আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়?
CSE তে শেখানো হয় প্রোগ্রামিং (সি ল্যাংগুয়েজ,জাভা), এলগরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার, ডাটাবেস, ম্যাথ, অপারেটিং সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স,কম্পাইলার, গ্রাফিক্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্কিং এসব বিষয়।
.
৩)BME
পুরো নামঃ বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৩০
পরিচিতি- একবারেই নতুন একটি বিষয়। অভিনব বিষয় টি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলের প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। কি পড়ানো হয়? বায়োমেকানিক্স, বায়োইলেক্ট্রিসিটি, বায়োম্যাটারিয়ালস, ইভেন - এনাটমি আর ফিজিওলজিও। বায়োলজি অপছন্দ কর যারা, তারা হয়ত অনাগ্রহী হয়ে পড়েছ। কিন্তু আসলে এখানে বায়োলজি কে গুরুত্ব দেয়া হয় না বরং এটি "এপ্লিকেশন অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন লিভিং বেইং"।
.
ফ্যাকাল্টি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
৪)CE
পুরোনাম- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৯৫
পরিচিতি- নির্মাণে নকশা, ব্যবস্থাপনা, গঠন, নির্ধারণ তদারকি, পরিকল্পনা ইত্যাদি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রধান কাজ। তাই কোনো কিছু নির্মাণে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর অনুপস্থিতি অকল্পনীয়। ইন্টারেস্ট আর পরিশ্রম থাকলে সহজেই ভাল করা সম্ভব। এইখানে প্রধানত যেই বিষয় টা পড়ানো হয় তা হল mechanics, এছাড়া ড্রয়িং, designing এর উপর ও ভাল দখল থাকা চাই। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান শাখা চারটি
I. Structural Engineering
II. Transportation Engineering
III. Geotechnical Engineering
IV. Environmental Engineering
.
.
৫) WRE
পুরো নাম- ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা-৩০
.
পরিচিতি- মূলত সিভিলের থেকে আলাদা হয়ে এটি সমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছে। পানি সম্পদ প্রকৌশল পানির ভৌত অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। বন্যা, শহরের-কারখানা-সেচ এর পানি সরবরাহ, নদী ভাঙ্গন রোধ, নদীর শাসন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং ডিজাইন করে থাকে। হাইড্রলিক পাওয়ার, বাধ, খাল, পানিধস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়। সিভিলে যে বেসিক বিষয় গুলো দরকার, তার সবই WREতে অত্যাবশ্যক।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং
৬)Che E
পুরোনামঃ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৬০
.
পরিচিতিঃ রসায়ন ভাল লাগলে নির্দ্বিধায় চলে এসো এই বিভাগটি তে পড়তে। যদিও,রসায়ন আর কেমিকৌশল মোটেও এক বিষয় নয়। কেমিস্ট কাজ করেন ল্যাবে আর কেমিকোশলীদের কাজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো তে। প্রধান কাজগুলো হল –Design, manufacture and operating plants,
Development of new or adopted products।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র আর লাইফ সাইন্স, অর্থাৎ জৈব রসায়ন, অণুপ্রাণবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নকে সাথে নিয়ে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনকভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করে।
.
৭)MME
পুরো নাম- ম্যাটারিয়াল এন্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৫০
.
পরিচিতি- আমি শিওর, অনেকেই বিষয় টি চেনোই না। আজ প্রথম নাম শুনলা! হতেই পারে। এটির বাংলা বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ।সকল বস্তুকে ৫টি প্রধান ভাগ(মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট) করে স্টাডি করে MME। অনেক ডিটেইল বলা যাবে। সেসব নাহয় একদিন সাবজেক্ট রিভিউ করে বলে দেবো।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
৮)ME
পুরো নাম- মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ১৮০
.
পরিচিতি- পড়ার বিষয়? বলছি-
Applied Mechanics, Fluid Engineering,Heat Transfer,
Tribology,Aerospace & Automobile,Energy Conversion, Fuels & Combustion Technologies,Nuclear Engineering, Power Engineering, Advanced Energy Systems, Solar Engineering, Petroleum Ocean,, Offshore & Arctic Engineering, Environment & Transportation, Noise Control & Acoustics, Rail Transportation, Solid Waste Processing, Engineering & Technology Management, Manufacturing Engineering, Pressure Vessels & Piping, Systems & Design, Fluid Power Systems & Technology, Electrical & Electronic Packaging, Robotics
কি? মাথা ঘুরতেছে? এসব কিছুই পড়ানো হয় মেকা তে। কঠিন মনে হলেও, ইন্টারেস্টিং তো বটেই। আর জব নিয়েও চিন্তা নেই।
মেকাদের ডিমান্ড কখনোই কমবার নয়
.
৯) NAME
পুরো নাম- নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা-৫৫
.
পরিচিতি-বিদেশে এটি পরিচিত Maritime Engineering বা Ocean Engineering বা Offshore Engineering হিসেবে। মূলত জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও এর ক্ষেত্র আরও অনেক বিস্তৃত।
.
১০) IPE
পুরো নামঃ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং
আসন সংখ্যা- ৩০
.
ম্যানুফেকচারিং ও ম্যানেজমেন্ট - এই দুই বিষয়ের কম্বিনেশন হচ্ছে আই পি ই।এই বিভাগে প্রডাক্ট ডিজাইন,ম্যনুফেকচারিং এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা সহ ইঞ্জিনিয়ারিং এর মৌলিক বিষয় সমূহ পড়ানো হয়ে থাকে।কিন্তু আই পি ই তে ম্যানুফেকচারিং এর পাশাপাশি ম্যানেজম্যন্ট এর প্রতি জোর দেয়া হয় যার ফলে আই পি ই ইঞ্জিনিয়ার রা ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি ম্যনেজম্যন্ট বিষয়ে দক্ষতা লাভ করে।
.
***ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিটেকচার
.
১১) Architecture
আসন সংখ্যা- ৫৫
.
পরিচিতি- আর্কির শিক্ষার্থীর জন্যে জীবন, প্রকৃতি আর মানুষ হল পড়ার বিষয়। এর সাথে সম্পর্কিত যা যা হতে পারে সবই এখানে পড়ানো হয়। ডিজাইন করা আর তাকে ডেভেলপ করা এটাই মূল কাজ। ডিজাইন যে কোন বিষয় এর হতে পারে। ৫ বছর প্রায় ২০০ ক্রেডিট এর মাঝে ইতিহাস থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিকাল থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনেক কোর্স পড়তে হয়। আবার ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব সাবজেক্ট এর বৈচিত্র যে কাউকে মুগ্ধ করে দেবে।
.
১২) URP
পুরো নামঃ আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং
আসন- ৩০
.
পরিচিতি- নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি মূলত পূরকৌশল, স্থাপত্য বিদ্যা এবং সামাজিক বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ। কি, অদ্ভুত মনে হচ্ছে? আসলে আমাদের দেশে স্থপতিরা স্থাপনার নকশা করে, পুরকৌশলীরা সে স্থাপনা নির্মাণ করে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সে স্থাপনাগুলো কোন নগরের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকা রাখছে কি না বা সে সকল স্থাপনাগুলোর আদৌ কোন দরকার আছে কিনা বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নগরের এবং নাগরিকদের কি কি দরকার সেসবের জন্য URP এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
.
Maruful Anam Rangon