খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) , How to Prepare

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার অন্যতম তীর্থস্থান। সুউচ্চ একাডেমিক মান, সুশৃঙ্খল ও সাজানো গোছানো ক্যাম্পাস সবসময়ই ভর্তিপিপাসুদের মনে জায়গা করে নেয়। আগামী ২০ অক্টোবর সকাল ৯ঃ৩০ টা থেকে দুপুর ১২ঃ০০ টা পর্যন্ত ২০১৭-২০১৮ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কুয়েট এবারও দশ হাজারের বেশি ভর্তিযোদ্ধাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে। তাই কুয়েটের জন্য লড়াইটাও হবে বেশ কঠিন। প্রস্তুতিও হওয়া চাই অনেক ভাল।
__________
পরীক্ষার প্রস্তুতি:
তুমি ইন্জিনিয়ারিং পড়তে চাও এটার অর্থ হচ্ছে তোমার কারিকুলামের মূল পাঠ্য বইয়ের উপর তোমার সম্পূর্ণ দখল থাকতে হবে। যে বিষয় গুলিতে সমস্যা আছে যতটা সম্ভব চেস্টা করা যায় কনসেপ্টটা ক্লিয়ার করে নাও। পদার্থ,রসায়ন এ জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীরই কোন কোন টপিকসে যেমন- রাসায়নিক পরিমাপ, শব্দ বা আলো তে সমস্যা হয়ে থাকে। এই বিষয় গুলো যতটা সম্ভব প্রাকটিস করে ঝালিয়ে নাও। গণিতের জন্য তুমি যে লেখকের বই ফলো করেছে সেই বইটি আরেকটু বেশি করে প্রাকটিস করে নাও। এই পর্যন্ত আসতে পারলে তোমার জন্য থাকছে প্রশ্নব্যাংক। চেস্টা কর ,যতটুকু তুমি সমাধান ও আয়ত্ত করে পার। তুমি এই জায়গাটাতে তুমি যতটুকু শ্রম দিবা তুমি ততটুকু এগিয়ে থাকবা। ইংরেজির জন্য খুব প্রেশার নেয়ার দরকার নেই। প্রশ্নব্যাংক প্রাকটিস করতে থাক সেটাই যথেস্ট হবে।
__________
পরীক্ষার হলেঃ
প্রশ্নপত্র হবে চারটি বিষয়ের উপর। পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি। প্রত্যেকটিতে ২৫ টি করে মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন থাকবে। কোন লিখিত নেই। আর্কিটেক্ট এর ভর্তিপরীক্ষাও একই প্রশ্নে হবে। ইংরেজি বাদে বাকি গুলোর প্রতিটির প্রশ্নের মান ৬ করে এবং ইংরেজির জন্য ২ করে মোট ৫০০ মার্ক। অর্থাৎ পরীক্ষার হলে তোমাকে খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি ইংরেজির জন্য ঠিক কতটুকু সময় দিতে যাচ্ছ। উত্তর পত্রের ওএমআর শিট পূরণের জন্য 2B পেন্সিল ব্যাবহার করা যাবে তবে ব্যাকআপ হিসেবে সবসময় কলম অবশ্যই রাখবে। আলাদা খসড়া সরবরাহ করা হয় না। প্রশ্ন পত্রেই খসড়া করা যাবে। সূত্রে মান বসিয়ে হিসাব করার সময় পারলে সূত্রটি প্রশ্নের পাশে লিখে নাও। যেমন- সূত্রে "g^2" ভাগ অবস্থায় আছে তুমি শুধু "g" দিয়ে ভাগ করেও অপশন পেয়ে যেতে পার। তুমি হিসেব করেই বসালে কিন্তু ভুল হয়ে গেল।
ক্যালকুলেটর এমএস/ইএস/ইএস প্লাস সবই ব্যবহার করা যাবে। তবে পরীক্ষার হলে একাধিক ক্যালকুরেটর না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। অনান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইস যেমন- স্মার্ট ওয়াচ ইত্যাদি বহন করাটা সব জায়গার ভর্তি পরীক্ষার জন্যই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সিদ্ধান্ত তোমার।
____________
যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থাঃ
রাজধানীর বাইরের সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্যই যাতায়াত ও থাকার বিষয়টা অনেক বড় ইস্যু। দেশের সব জায়গা থেকেই সড়কপথে খুলনার যোগাযোগ বিদ্যমান। রেলপথেও যোগাযোগ ভাল সেক্ষেত্রে অবশ্যই রেলের শিডিউল মিলিয়ে টিকেট কাটতে হবে। যারা রেলপথে খুলনাতে এসে নামবে, কিংবা ঢাকা থেকে মাওয়া রুটে আসবে তাদের জন্য বলি খুলনা শহর থেকে কুয়েট ১৩ কিঃমিঃ উত্তরে "ফুলবাড়ীগেট" এ অবস্থিত।শিববাড়ী,পাওয়ার হাউজ, ডাকবাংলা, রয়েল মোড় থেকে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা পাবে ২০-২৫ টাকা ভাড়া নিবে। তবে গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা থেকে সরাসরি গাড়ি পেলে ভাল না হলে ওখান থেকে শিববাড়ী,ডাকবাংলা, পাওয়ার হাউজ মোড়ে এসে গাড়িতে উঠতে হবে। নরমাল দিনে ৩০-৪০ মিনিটে পৌঁছানো যায় তবে ভর্তি পরীক্ষার কারণে মাঝে রাস্তাতে যানজট হয়ে থাকে, তাই সময় যতটা হাতে রাখা যায় ততটা হাতে রেখেই রওয়ানা দিতে হবে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে বাসে কিংবা ঢাকা থেকে আরিচা হয়ে আসবে তারা খুলনা শহররের আগে ফুলবাড়ীগেট নেমে যেতে পারবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে জায়গাটা "ফুলতলা" নয় "ফুলবাড়ীগেট"। বাসের সুপারভাইজাররা অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে জানেন তবে নিজে সচেতন থেকে সঠিক জায়গায় নামাটা জরুরি। 
থাকার ব্যাপারে বলতে গেলে ছেলেদের জন্য কুয়েটের ৬ টি ছেলেদের হল, সেন্ট্রাল মসজিদ ,ক্যাম্পাসের পাশের মেসসমূহ উন্মূক্ত থাকে। হসপিটালিটির জন্য কুয়েটিয়ানরা অদ্বিতীয়। মেয়েদের জন্য রোকেয়া হলেও থাকার ব্যবস্থা হয় তবে সাথে আসা অভিভাবককে বাইরে ব্যবস্থা করে নিতে হবে। হোটেল ভাড়া নিবেন যারা তাদের জন্য- খুলনা শহরের রয়েল মোড়, ডাকবাংলা তে কিছু ভাল, মাঝারি মিলিয়ে ব্যবস্থা আছে তবে সেক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে নিতে হবে কেননা অনেক আগে থাকতেই এগুলা বুকিং হয়ে যায়।
___________
পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছানোঃ
গত বছর কুয়েট থেকে দূরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল। তবে এ বছর সেটি নেই। সুতরাং এ বছর সকল পরীক্ষা কুয়েট ও কুয়েট থেকে হাটা দূরত্বেই হবে। সুতরাং খুব সহজেই তুমি হল খুঁজে পাবে। যদি তোমার দেরিও হয়ে যায় সেক্ষেত্রে চিন্তার কারন নেই।গতবার দেরি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নিকটবর্তী হলে ঢুকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী প্রচন্ড আন্তরিকতার সাথে ব্যাপারগুলো সমাধান করে থাকেন। তাছাড়া তোমাকে সাহায্য করার জন্য অনেক অনেক স্বেচ্ছাসেবী থাকবে ঐদিন ,আশা করি তাদের আন্তরিকতাও তোমরা মনে রাখার মতইই পাবে। সম্মানিত অভিভাবক মন্ডলীদের যেহেতু ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হয় না সেহেতু বিভিন্ন অন্ঞ্চল ভিত্তিক, কলেজ ভিত্তিক অ্যাসিয়েশনের প্যান্ডেলে পরীক্ষার জন্য সব রকম সহোগিতার পাশাপাশি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বসে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
সুতরাং কিভাবে যাব?, কই থাকব? ব্যাপার গুলা মাথায় রেখ শুধু ,চাপ হিসেবে নয়। যতটুকু সময় আছে প্রাকটিস করে প্রস্তুত হও। তোমাদের স্বাগত জানাতে কুয়েট বর্ণিল সাজে সজ্জিত হচ্ছে। অনেক অনেক শুভ কামনা থাকল তোমাদের রঙিন স্বপ্নগুলোর জন্য।
_____________
মোঃ আল-আমিন আশিক
৪র্থ বর্ষ, পুরকৌশল বিভাগ
সাবেক পরিচালক,
গাংনী গণিত পরিবার।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.