জব সেক্টর : মেকানিক্যাল (পাওয়ার প্ল্যান্ট)

একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ন্যাচারালি যে সেক্টরের দিকে মন অজান্তেই চলে যায়, তার ভিতর অটোমোবাইল ও পাওয়ার প্ল্যান্ট অন্যতম।

পৃথিবীতে মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিনই প্রয়োজন হবে বিদ্যুতের। তা যে উপায়েই উৎপন্ন হোক না কেন। হতে পারে সেটা Hydroelectric, হতে পারে Thermal কিংবা হতে পারে ইঞ্জিন বেজড।

তবে একটা কথা মনে রাখা উচিত, এখন যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো হচ্ছে কিংবা ভবিষ্যতে হবে, সেগুলোর বেশিরভাগই ইঞ্জিন বেজড পাওয়ার প্ল্যান্ট। সামনে গ্যাসের মজুদ কমে যাবে বিধায় HFO (Heavy Fuel Oil) ফুয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বা হবে।

এবং, HFO ই সামনের দিনে দেশ শাসন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিউক্লিয়ার কিংবা পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টও হচ্ছে। কিন্তু, আমাদের দেশে এর বিস্তৃতি কতটা হবে সে ব্যাপারে বলতে পারছি না।

পাওয়ার সেক্টর হচ্ছে এমন একটা সেক্টর, যেখানে ৪ বছর ধরে বইয়ের পাতায় পড়ে আসা ব্যাসিক সব ইকুইপেমেন্টে ভরপুর। পাম্প, বয়লার, ইঞ্জিন, টারবাইন, রেডিয়েটর, কুলিং টাওয়ার, চিমনি, ট্রান্সফর্মার কি নেই!!!

পাওয়ার প্ল্যান্টে মূলত দুই রকম ইঞ্জিনিয়ার থাকে: অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার ও মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার।

আমাদের দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার পিছনে যে কারিগরেরা দিনরাত পরিশ্রম করেন, তারাই হচ্ছেন পাওয়ার প্ল্যান্টের ইঞ্জিনিয়ার।

যে কোন পাওয়ার প্ল্যান্টেই শিফটিং ডিউটি থাকে। চারটা গ্রুপ থাকে। বাই রোটেশন, একটা গ্রুপ ছুটিতে থাকে আর বাকিরা রাত, বিকাল ও সকাল শিফটে ডিউটি করে ছুটিতে যায়।

কিছু পাওয়ার প্ল্যান্টে দুই রাত, দুই বিকাল, দুই সকাল অর্থাৎ টোটাল ছয়দিন ডিউটির পর দুইদিন বন্ধ। আবার কোথাও চার রাত, চার বিকাল, চার সকাল অর্থাৎ টোটাল ১২ দিন ডিউটির পর চারদিন বন্ধ।

আমাদের সমাজে even আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া স্টুডেন্টদের ভিতরে কিছু ভুল ধারণা আছে এই সেক্টরকে নিয়ে। তাদের ধারণা, পাওয়ার প্ল্যান্ট মানেই কন্ট্রোল রুমে বসে কন্ট্রোল করা, সুইচ টিপা আর কম্পিউটারে ক্লিক মারা। এটা মারাত্মক ভুল ধারণা। আমারও এরকম ধারণা ছিল। কিন্তু, কিছুদিন কাজ করার সৌভাগ্য হবার পর সেটা ভেঙে যায়।

মনে রেখো, তুমিও একদিন চেয়ারে বসে কন্ট্রোল করবা। কিন্তু, মেকানিক্যালদের সবচাইতে ভাস্ট সেক্টর সম্পর্কে তুমি ভার্সিটি লাইফে যা পড়ে আসছো, তার নাম পাওয়ার প্ল্যান্ট না। এমন কি তা ৫০০ ভাগের ১ ভাগও না।

প্রথমে নিজের হাতেই কাজ করতে হবে। ইঞ্জিনের ভয়ংকর সাউন্ডের সাথে নিজেকে এ্যাডজাস্ট করতে হবে। ইঞ্জিন থেকে চুইয়ে পড়া তেল মুছতে হবে কাপড় দিয়ে। নিজ হাতে বয়লার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইঞ্জিন চালাতে হবে, দেখভাল করতে হবে। অনেক কষ্ট অবশ্য। রাত জাগা, টানা ডিউটি করা এসব। সবাই পারে না। আমিও সেরকমই একজন অভাগা।

কিন্তু, এই কাজ করে না শিখলে কন্ট্রোল রুমে বসে ডিসিশন দিবা কিভাবে???

স্যালারী প্রথমে হয়তো অনেক প্ল্যান্টেই কম দিবে। কিছু প্ল্যান্টে ২৪-৩০ হয়। বাকিগুলো ১৫-২০ এর মত।

অংকটা কম দেখালেও, তোমাকে উপরে উঠার যে সিঁড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করে দিবে, তা এই অংককে অনেক বড় করে দিবে একসময়।

সবশেষে একটা কথাই বলবো, "পাওয়ার প্ল্যান্টে জব করো" এই কথাটা একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বলতে যে গর্ব হবে তা অনুভব করবা হৃদয় দিয়েও.... 
Saifullah Sakib,CUET

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.