মঙ্গল গ্রহে মানুষ জাতির জনক বা আদি পিতা যিনি হতে যাচ্ছেন তিনি হলেন এলন মাস্ক। সৃষ্ট মানুষকে বাচানোর দায়িত্ব বা ভাবনা মানুষের চেয়ে স্বয়ং স্রষ্টারই যেন বেশি। তাই তো পৃথিবীতে মানুষের মধ্য দিয়ে তিনি জীবন যাত্রাকে উপভোগ্য করার সাথে সাথে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে মানুষের মাধ্যমেই কাজ করে চলেছেন।
বর্তমান সময়ের এমন এক জীবন্ত কিংবদন্তি এলন মাস্ক [ Elon Musk], বয়স মাত্র ৪৫ হলেও, সুদর্শন এই যুবক, বিশ্বে তিনি ২১ তম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বের ৯৪ তম ধনী ব্যক্তি, অথচ ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র ২০০০ ডলার দিয়ে, ছাত্র অবস্থায় রুমে বাথরুল ছিলনা বলে জিম এ গিয়ে গোসল করেছেন অনেক দিন।
মানব জাতিকে বাচানোর চেষ্টায় নিজের উদ্যোগে যিনি কাজ করে চলেছেন এবং সফলতা লাভ করেছেন, হয়ত তিনি হয়ে উঠবেন মঙ্গল গ্রহে মানুষ্য জাতির বংশ বিস্তারের জনক। ২০২৪ সালে তিনি ৪০, ০০০ হাজার লোক নিয়ে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করতে যাচ্ছেন। সেখানেই থেকে যেতে পারেন।
মা কানাডীয় হলেও, বাবা ছিলেন দক্ষিন আফ্রিকান একজন ইঞ্জিনিয়াত। ফলে তিনি জন্ম গ্রহন করেন আফ্রিকায়। বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার বয়স যখন ৯ বছর। ৩ ভাই বোনের মধ্যে ছোট বেলা থেকেই তিনি যা হাতের কাছে পেয়েছেন শুধু পড়েছেন আর স্বপ্ন দেখেছেন একদিন বিশ্বকে পরিবর্তন করবেন। এভাবে নিজেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখে নেন। তিনি যা পড়েন সেটাই আর ভুলে যেতেন না। এভাবে মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রথম কম্পিউটার গেম ব্লাস্টার তৈরী করে বিক্রি করেন ৫০০ ডলার। তার মাথায় একই চিন্তা যে, বিশ্ব কে পরিবর্তন করতে হলে তাকে আমেরিকায় যেতে হবে। সে উদ্দেশ্যে প্রথমে পাড়ি জমান কানাডায়, সেখানে নাগরিকত্ত্ব নেন। দু ভাই মিলে ছোট এক রুম ভাড়া নিয়ে মাত্র ২০০০ ডলার দিয়ে সিলিকন ভ্যালিতে ১৬ বছর বয়সে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইন ট্রানজেকশন তার তৈরী, এভাবে পে পল তৈরী করে তিনি ১৮ বছর বয়সেই প্রচুর আয় করতে শুরু করেন। কিন্তু তার মন পড়ে ছিল এটা যথেষ্ট নয়, তাকে পৃথিবী পরিবর্তন করতে হবে।
পদার্থ বিজ্ঞান পড়তে আমেরিকার পেনসেলভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান, বুঝতে পারেন কার্বন ডাই অক্সাইড নি:সরনে পৃথিবী যে কোন সময় ধধংস হয়ে যাবে। বিশ্বে প্রথম (আমেরিকাতে) গড়ে তোলেন সোলার সিটি কম্পানী যা বাসা, অফিসে বিদ্যুত এর পরিবর্তে সৌর শক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। এরপরে ক্যালিফোর্নিয়াতে গড়ে তোলেন গাড়ি শিল্প (Telsa Auto motors) , যা ব্যাটারী চালিত, চার্জ এ চলবে, জ্বালানী খরচ করবে না এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছাড়বে না।
একই সাথে তিনি প্রথম ব্যক্তি গত উদ্যোগে মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠিয়ে সেখানে বসবাসের জন্য স্থাপন করেন স্পেস এক্স(spaceX) । যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে যেন মঙ্গল গ্রহে যাওয়া যেতে পারে।
সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার পরিবর্তে ১০০ ঘন্টা করে কাজ করতে করতে বউ ছেড়ে গেল ৫ সন্তান রেখে। ৩ টি রকেট ক্ষেপন বিফলে গেল, সফলতার মুখ দেখলেন না। চার্জ এ চলা গাড়ির ব্যবসা ধধস খেল। কিন্তু তিনি আশা ছাড়লেন না। এর মধ্যে জীবনে এলেন অপর একজন নারী ২০০৮ সালে।
শেষ বারের মত সব টাকা খরচ করে ৪র্থ বার রকেট পাঠালেন মঙ্গল গ্রহে এবং সফল হলেন ২০১০ সালে। নাসা তাদের সাথে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করতে এগিয়ে এলো, বেচে উঠলো তার স্পেস এক্স।
এদিকে গাড়ির টেকসই এবং মান বাড়াতে পারছিলেন না বলে হতাশা এবং লোনে পড়ে গেলেন। কেউ টাকা দিতে রাজি হলনা।
ওবামা সরকার তাকে সরকারী ফান্ড থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার ঋন দিলেন পরিবেশ বাচাতে। ভাল টেকনিক্যাল দল অবশেষে টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী, গুনগত মানের আধুনিক গাড়ি তৈরীতে সক্ষম হলেন। এই গাড়িতে জ্বালানী তেল, ডিজেল লাগে না। ৯ বছরে শোধ করে দিলেন সরকারী সব লোন।
বর্তমানে তিনি জীবন্ত একজন কিংবদন্তী।
আইন্সটাইনের মত তিনিও বলেন, ১ % হল ভাগ্য বাকি ৯৯% পরিশ্রম। যদি কেউ কোন লক্ষ্যে নিরলস ভাবে লেগে থাকে, তা সে অর্জন করতে পারবেই। ৪০ ঘন্টা যে কাজ করে সে সারা বছরে যা করতে পারবে ১০০ বা ৮০ ঘন্টা কাজ করলে তা ৬ মাসে অর্জন করা সম্ভব। কারন মানব জীবনে সময়ের বড় অভাব তাই সময় কে কাজে লাগানো সকলের উচিত বলেই তিনি মনে করেন। এবং আশা না ছেড়ে ত্রুটি সংশোধন করে এগিয়ে থাকাতেই সফলতা আসে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেছেন যে অনেকেই বদলাতে বা নতুন কে নিতে পারেনা, কিন্তু যখন হয় পরিবর্তন হও অথবা ধধংস এসে দাঁড়ায়, তখন মংগলের জন্য পরিবর্তন কে মেনে নিতেই হয়।
পৃথিবী আজো সুন্দর এবং আমরা অনেক সহজতর জীবন যাপন করছি কারন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ রাত দিন জেগে মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করে চলেছে। আমরা যারা তরুন বয়সে সময় নষ্ট করি আর হতাশায়, দোষারোপে জীবন যাপন করি, আমাদের উচিত ব্যক্তি কেন্দ্রিক লক্ষ্য স্থির না করে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সে দিকে নিমগ্ন হয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া।হয়তো তাহলেই ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ব্যক্তি, পরিবার জীবন উপকৃত হবে, হবে সমাজের উন্নয়ন।
তবে চিন্তা ভাবনা কাজ যাই হোকনা কেন, তা যেন হয় কল্যানের, নিজের বা শত্রুর অকল্যানে নয়।
সংগৃহীত