বইয়ের নাম: রসায়ন ২য় পত্র
লেখক: প্রফেসর ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী ও অধ্যাপক হারাধন নাগ
প্রথমেই বলে রাখি এটি একটি থ্রিলার বই! বাংলাদেশের বেস্ট সেলার থ্রিলার! গায়ের রোম খাড়া করে দেবে, আপনি পড়তে পড়তে বারবার বলে উঠবেন- আমি তো শিহরিত! এরকম একটি বই। তাই কেউ যদি সাজেশন চায় থ্রিলার বইয়ের, চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করুন বইটি!
বইটি খুললেই আপনি দেখবেন একটা ছকে অগোছালোভাবে A B C D লেখা। কিন্তু এই ছক যে বানিয়েছে সে এতোটাই মূর্খ যে সে বর্ণমালা শুরু করেছে H দিয়ে! পরে অবশ্য He দেখে মনে হয় এটা বোধহয় ইংরেজি বর্ণমালা না, হিব্রু বা ওরকম কিছু হতে পারে! বুঝতেই পারছেন, থ্রিল শুরু হয়ে গেল! মাথায় ঘুরবে, কি এগুলো? কেন এগুলো? এভাবে আপনি চিন্তার সাগরে ডুব দিয়ে খেই হারিয়ে ফেলবেন! তার কিছুক্ষণ পর বুঝবেন এটা আসলে পর্যায় সারণি এবং এখানে ১১৮টা মৌলের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে বাচ্চাকাচ্চা লেখা!
এরপর বইয়ের সূচিপত্র দেখবেন। পাঁচটা অধ্যায়ে ভাগ করা। পরিবেশ রসায়ন, জৈব রসায়ন, পরিমাণগত রসায়ন, তড়িৎ রসায়ন এবং অর্থনৈতিক রসায়ন। পাঁচ পাঁচটা আলাদা থ্রিলার! ওয়াও! ড্যান ব্রাউন- সিডনি শেলডন এর কাছে কিছুই না!
পরিবেশ রসায়ন পড়ে আপনি কি বুঝবেন? আমি নিজে বুঝিনি তো কি বুঝাবো! কিন্তু এখানে অনেক রথী-মহারথী কে পাবেন! চার্লস বয়েল গে লুসাক এভোগেড্রো গ্রাহাম ভ্যান্ডার, কে নেই! সবাই সূত্র দিয়েছে সমস্যা সমাধান করার! পড়েই আমি তো শিহরিত!
জৈব রসায়নে কি আছে? পড়লেই বুঝবেন! এটা নিয়ে এক্সক্লুসিভ লিখেছি নিচে!
পরিমাণগত রসায়নে কি আছে? আরে এতো খালি দেয়া নেয়ার খেলা! সম্পর্কের খেলা! আই মিন, ইলেক্ট্রন দাও নাও, জারণ বিজারণ করে যুগপৎ বিক্রিয়া ঘটাও! কিন্তু হায় হায়! বিক্রিয়া তো এমন হওয়ার কথা না! আপনি তখন ঝানু গোয়েন্দা এজেন্সি টাইট্রেশন এর কাছে গিয়ে গোয়েন্দা হায়ার করবেন, কে ক্ষারক কে অম্ল জানার জন্য! এছাড়া আপনাকে ঘোল খাওয়ানোর জন্য আছে আয়োডোমিতি-আয়োডিমিতি। বিয়ার-ল্যাম্বার্ট সাহেব মাথা খাটিয়েছেন এখানে!
তড়িৎ রসায়নে কি আছে? বলুন কি নেই! এখানে আছে কার কতো ভোল্ট, কার মধ্যে কাকে রাখতে পারবেন, কাকে পারবেন না সেসব! পড়তে পড়তে আমি আবারও শিহরিত!
অর্থনৈতিক রসায়ন পড়লে কি টাকা আসবে? আসবে যদি আপনার একটা কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি থাকে বা একটা সিমেন্ট বা গ্লাস বা পেপার কারখানা থাকে! তা না থাকলে আপনি এই বই পড়ে ওসব কারখানায় শ্রমিকের চাকরি পেতে পারেন!
জৈব রসায়ন এক্সক্লুসিভ 😎 :
এই অধ্যায় পড়লে জানবেন নামকরণ কিভাবে করা হয়! আপনার বাচ্চার না, যৌগের!
কে কত শক্তিশালি এবং এর ভিত্তিতে কার নাম আগে আসবে! (লেখকরা এখনও শ্রেণি বৈষম্য থেকে বেরোতে পারেনি!)
কে কার সাথে বিক্রিয়া করে! (সব যৌগ একাধিকের সাথে সম্পর্ক রাখে, কিএক্টা অবস্থা!)
কাকে কিভাবে চেনা যায়! (এইখানেও তারা বহুরূপি!)
আপনাকে সংকেত দিয়ে বলবে নাম কি? আপনে ঘেমে নেয়ে একাকার! কে এই যৌগ? এ কেমন থ্রিল? কে এলকেন কে এলকিন, কে ইলেকট্রোফিলিক কে নিউক্লিওফিলিক- একের পর এক শিহরণ জাগানিয়া থ্রিল! রহস্য! শুধু কি এই? আপনাকে বের করতে হবে কে কোন শ্রেণির, কে কখন কোথায় রূপান্তরিত হয়!
আমি আর শিহরণ নিতে পারছিলাম না বলে এই অধ্যায় পড়া হয়নি!
এবার দু শব্দে রিভিউ শেষ করি, বইটা ভয়ংকর!
এই বই পড়ুন, বেঁচে থাকার সাধ পূর্ণ করুন। এবং গর্ব করুন, বাংলা ভাষায়ও বিশ্বমানের থ্রিলার লেখা সম্ভব!
পুনশ্চ: এই বই পড়তে হবে না এই শুকরিয়ায় আমি মিলাদ দেব। মিলাদের তবারকের জন্য এইচএসসি সাইন্স গ্রুপে পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থীর বাসায় নক করুন এবং জিজ্ঞাসা করুন, হাজারী ও নাগের জৈব রসায়ন কেমন লাগে?
রেটিং: রেটিং এই বইয়ের মান বোঝাবে না! শুধু বলতে পারি, আমি তো শিহরিত!