আমাদের মধ্যে আজও কিন্তু সায়েন্স নিয়ে পড়ার একটা বিরাট প্রবণতা দেখা যায়। আর সায়েন্স নিয়ে পড়ার মূল কারণই হল হয় ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন যাতে পূরণ হয়। অনেকসময় তো আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও ফেলি, কিন্তু তারপর তাতে তেমন সফল হতে পারি না। সেইরকম ভাবে কেরিয়ারে উন্নতিও করতে পারি না। এর মূলে আসলে কারণ একটাই। সেটা হল আমরা ঠিকঠাক রাস্তা জানি না। ঠিকমতো জানি না ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে কোন কোন দিকে কেরিয়ার বানানো যায়। তাই আজ রইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ে কেরিয়ার তৈরি করার হাল-হকিকত।
১. সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে কেরিয়ার
ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একটা অনেক বড় জায়গা। কন্সট্রাকশন ইন্ডাসট্রি তো বটেই, এমনকি বিজনেস, ফিনান্স আর মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রেও কিন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক। নির্মাণ, নির্মাণের নতুন প্রযুক্তি, সেই প্রযুক্তি করতে গিয়ে নতুন উদ্ভাবন, এই সব নিয়ে কিন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বেশ সুযোগ। আর নির্মাণ মানেই সুরক্ষার দিকটা প্রত্যক্ষভাবে দেখতেই হয়। তাই দায়িত্বটাও অনেক।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কিন্তু মূল দুই শাখায় বিভক্ত, কন্সালটিং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং আর কন্ট্রাকটিং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। কন্সালটিং-এর ক্ষেত্রে শুধু একটা প্রোজেক্টের নকশা করার পর্যন্ত ধাপে আপনি থাকতে পারেন। আর অন্যদিকে একজন কন্ট্রাকটিং-এর ক্ষেত্রে বিষয়টা হয় সেই নকশা বা ব্লু-প্রিন্টকে বাস্তবায়িত করা, নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে মাঠে নেমে কাজ করার মতো।
২. কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে কেরিয়ার
ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ দিক হল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্র। রসায়ন বিদ্যায় যদি আগ্রহ থাকে, আর যদি আগ্রহ থাকে গাণিতিক জটিলতার সমাধানে, তাহলে কিন্তু এই ক্ষেত্র বেছে নেওয়াই যায়। ছোট ছোট নানা জিনিস থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বদল কিন্তু এই ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যাই শেখায়। তাই ফুড প্রসেসিং টেকনোলজি বা ওয়েস্ট-ওয়াটার টেকনোলজির ক্ষেত্রেও এই বিদ্যা কাজে লাগতে পারে। তাছাড়া কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কিন্তু আরেকদিক থেকেও কেরিয়ার বানানো যায়। সেটা হল প্রোডাক্ট বা প্রসেস ডেভেলপমেন্ট সাইন্টিস্ট হতে পারা যায়, অর্থাৎ বিভিন্ন জিনিসের প্রসেসিং-এর ব্যাপারে গবেষণা করা যায়।
৩. মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে কেরিয়ার
বিশাল ক্ষেত্র আছে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে। যে কোনো প্রোডাক্ট তৈরিতে তো বটেই, পাশাপাশি সেই প্রোডাক্টের উন্নতি বা ডেভেলপমেন্টেও কিন্তু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অবদান থাকে। তাই বড় বড় কোম্পানীতে এই বিদ্যার যোগ্যতা দেখানো যায়। ম্যানুফ্যাকচারিং এরিয়া কিন্তু এখন খুবই চাহিদার জায়গা।
৪. এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
খুব একটা যে কাউকে চারপাশে এটা নিয়ে পড়তে দেখা যায় তা নয়। মানে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ওপরের ভাগগুলোর তুলনায়। কিন্তু এই বিভাগ নিয়ে পড়লে সুযোগ অনেক। যদিও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়লে এদিকে আসতে সুবিধা হয়, কিন্তু কম্পিউটার সায়েন্স বা ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়লেও এইদিকে আসা যায়। মূলত এয়ারক্রাফট, যুদ্ধবিমান, এমনকি যুদ্ধাস্ত্র বা আকাশযানের, উপগ্রহ এই সব বিষয়ের নকশাও দেখতে আর জটিলতা দূর করতে এই বিদ্যা সাহায্য করে। আর সবচেয়ে বড় কথা বেশ ইন্টারেস্টিং কিন্তু।
৫. টেকনিক্যাল রাইটার
একটু অবাকই হতে হয় শুনে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আবার লেখালেখি কি! কিন্তু এটাও একটা সুন্দর পেশা হতে পারে। আজকের বিশ্বায়নের বাজারে প্রোডাক্ট অনেক। সেইগুলো বিক্রি করার জন্য মানুষের কাছে সেগুলো উপস্থাপন করা খুবই জরুরী। মানুষকে রাজি করানোর জন্য আপনাকে আপনার বিদ্যা কাজে লাগিয়ে একটা প্রোডাক্ট সম্বন্ধে জানাতে হবে সবাইকে। খুব খারাপ পেশা নয় কিন্তু।
৬. এম.এস.সি. করা যায়
যদিও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মানে কোর্স শেষ করেই প্লেসমেন্টের মাধ্যমে চাকরী পেয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু কেউ যদি আরও পড়তে চায়, তাহলে এম.এস.সি. করা উচিত। তাহলে পরবর্তী চাকরীর ক্ষেত্রে আরও সুযোগ খুলে যায়।
৭. এম.বি.এ. করা যায়
যদি আপনার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে শুধু ইঞ্জিনিয়ার হতেই ইচ্ছে আটকে না থাকে, আরও বেশী কিছু হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে এম.বি.এ. করে নিন। তাহলেই বিদ্যা আর বিত্তর এমন যুগলবন্ধন কর্ম ক্ষেত্রেই দেখতে পাবেন। ২০১৬ সালের ক্যাট রেজাল্ট বলছে উত্তীর্ণদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। আপনিই বা বাদ যান কেন!
তাহলে এখন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে স্বপ্ন পূরণ করার পালা। আমাদের সাহায্যের হাত কিন্তু বাড়ানোই রইল।
সব বিষয়ের রিভিউ পড়তে ব্রাউজারে টাইপ করুন -www.engineersdiary.com.bd