2nd Time and RU- Asif Faisal


ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়বো। কিন্তু ২০১৬ তে এইচ.এস.সি পরীক্ষার সময় বুঝতে পারলাম যে আমি হয়তো ভালো কোন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এ ফর্ম-ই পারব নাহ। ঠিক করলাম বিভাগ পরিবর্তন করব। পরীক্ষার শেষের দিকে উদ্ভাস-এ ভর্তির সময় বাসায় জানালাম যে আমি বিভাগ পরিবর্তন করে 'ঘ' ইউনিটের কোচিং করব কিন্তু প্রথমে কেউই আমাকে সাপোর্ট করে নি। পরে ভাইয়া কে অনেক বোঝানোর পর ভাইয়া বাসায় অনেক কষ্টে রাজি করায়।
আমার ডিসিশন শুনে অনেকেই এমনকি বন্ধুরাও অনেক ঠাট্টা করত।

‌যাই হোক ঢাকায় গেলাম, কোচিং শুরু করলাম। পরিচয় হলো ঢা.বির আইন বিভাগের রাজ ভাইয়ের সাথে,ভাই ২০১৫ তে ঢা.বি-তে ' ঘ ' ইউনিটে ২য় হয়েছিল। স্বপ্ন দেখা টাহ শুরু হয়েছিল ভাইয়ের হাত ধরেই।ভাইয়ের কাছে প্রতিদিন পড়তাম। ভাই জহুরুল হক হল,সিনেট এসব জায়গায় পড়াত। প্রতিদিন পড়ানোর পর ভাই আমাদের ১ ঘন্টা করে পুরো ঢা.বি ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াত। ঢা.বির প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা কাজ করত। ঢা.বি ছাড়া আরও যে অনেক ভার্সিটি আছে সেটা মাথায়ই আসত নাহ। সবকিছু ভালই চলছিলো। কিন্তু যখন এইচ.এস.সি এর রেজাল্ট দিলো তখন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। ভাবছিলাম সব শেষ। সেই সময় শুধু রাজ ভাইকেই পাশে পাইছিলাম।ভাই যে সাপোর্ট টাহ দিয়েছিল সেটা কখনও ভুলতে পারব নাহ।ভাইয়ের কারনেই আবার সব নতুন করে শুরু করতে পারছিলাম।

শুরু হল এ্যাডমিশন টেস্ট। বাসায় না বলে ঢা.বির চারুকলার ফর্ম নিয়েছিলাম।পরীক্ষা দিয়ে প্রাথমিকভাবে টিকেও গেলাম।কনফিডেন্স অনেক বেড়ে গেল। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ছবি আকতে পারতাম নাহ,যার কারনে অংকনে ফেল করলাম।

তারপর গেলাম রাজশাহী। পরীক্ষা দিলাম ৩ টা ইউনিটে। ঢা.বির 'ঘ' ইউনিটের পরীক্ষা ২৮-১০-১৬ তে থাকায় রা.বি-তে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২৭-১০-১৬ এর পরীক্ষাটাই দিতে পারি নি।বাকিগুলো দিয়েই ঢাকায় চলে আসি।২৮-১০-১৬ তে ঢা.বির 'ঘ' ইউনিটে পরীক্ষা ছিল।খারাপ দেই নি। অইদিন আবার পরীক্ষা দিয়ে রাতে গেলাম চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে যে কি পরীক্ষা দিছি সেটা আজও বুঝতে পারি নাহ।
৩১ তারিখে ঢা.বির রেজাল্ট দেয়।রেজাল্ট ছিলো ৪৭.০০ (ফেইল)।স্বপ্ন ভাঙা টাহ কত কষ্টের সেটা তখনই বুঝতে পারছিলাম।
সব ভুলে ০২-১১-১৬ তে গেলাম খুলনা। ০৩-১১-১৬ ছিলো খু.বির পরীক্ষা। হঠাৎ সকালে রাজ ভাই ফোন দিয়ে বলে রা.বির রেজাল্ট দিয়ে দিছে।আমার ছোট্ট একটা ফোন ছিলো। ওটা দিয়েই রা.বির ওয়েবসাইট এ ঢুকলাম।দেখি রা.বির আইনে আমার সিরিয়াল Even ১৯৪।খোঁজ নিয়ে শুনি মোট সিট ২০০। সময়টা আমার জীবনের সব থেকে ভালো সময়ের মধ্যে একটা ছিলো। ভাবলাম অবশেষে আইনেই হল শুধু ঢা.বির জায়গায় রা.বি। খু.বির পরীক্ষাটা ফাজলামি করেই দিলাম। কিন্তু রাতে শুনি রা.বি-তে জোড়- বিজোড় করে রেজাল্ট দিছে আর প্রতিটাতে ১০০ জন করে নিবে।আমার সিরিয়াল ছিলো ১৯৪।
ভাইভা দিলাম, এরপর সিরিয়াল হল ১৬১। ভাবলাম একটু দেরী হলেও হয়তো ভর্তির ডাক পাব।
এরপর জা.বি-তে ২ টা ইউনিটে পরীক্ষা দিলাম, ওয়েটিং এ আসল। বি ইউনিটে ৭৭২ আর সি ইউনিটে ১১৪০। জা.বি-তে ভাইভায়ও ডাক পাইনি।
এরপর বেগম রোকেয়া সহ আরও কয়েক জায়গায় সিরিয়াল আসল কিন্তু চান্স আর হল নাহ। কিন্তু মনে মনে আশা ছিল যে অনেক দেরীতে হইলেও রা.বির আইনে হয়ত ভর্তির ডাক পাবো। জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আইনে আর ডাক পাইনি। শুধু ০.৫০ নম্বর আমার থেকে বেশি পেয়ে রা.বির আইনে অন্যজন ভর্তি হয়েছিল। অথচ যাদের কোটা ছিলো তারা আমার অনেক পিছনে থেকেও আজ রা.বির আইনে পড়ে। কোনো গতি না পেয়ে ঢাকার তেজগাঁও কলেজে সমাজবিজ্ঞান-এ ভর্তি হই।

আর এটাই ছিলো আমার সবথেকে শিক্ষনীয় সময়। নিচু অবস্থায় থাকলে একটা মানুষের কি অবস্থা হয় সেটা সেই সময়টাতেই বুঝতে পারছি। আশেপাশের মানুষগুলো সবাই কেমন যেন অচেনা হয়ে গিয়েছিলো।ভার্সিটির বন্ধুরা তো দুরের কথা, যারা আমার থেকে তুলনামুলক ভালো কলেজে পড়ত তাদের কথা শুনতে শুনতেই দিন যাইত।

কোথায় পড়ি সেটা কেউ জিজ্ঞেস করলে লজ্জায় বলতেও পারতাম নাহ। ঠিক করলাম তেজগাঁও কলেজ থেকে শুধু পরীক্ষা দিব আর অন্যদিকে সেকেন্ড টাইম প্রিপারেশন নিবো। মাঝে মাঝে কলেজে যেয়ে ক্লাস করতাম। কিচ্ছু ভালো লাগতো নাহ। খুব খারাপ লাগলে একাই ঢা.বি-তে গিয়ে বসে থাকতাম। সবসময় একা থাকতাম। সেকেন্ড টাইম সবথেকে সাপোর্ট পাইছি আমার ভাই আর রাজ ভাইয়ের থেকে। টার্গেট ছিলো শুধু জা.বি আর বি.ইউ.পি। হঠাৎ একদিন স্বর্গ বন্ধু ফোন দিয়ে বলে রা.বি-তে সেকেন্ড টাইম খুলছে। সত্যিই অনেক খুশি ছিলাম সেদিন।

‌ভয় ছিল একটা, সেটা হল মাঝে মাঝে মনে হত যে আমার এ্যাডমিশন আর ন্যাশনাল এর পরীক্ষা একসাথেই হবে। আর সেটাই হল। ন্যাশনাল এর ৩ টা পরীক্ষা আর জা.বি, রা.বি আর বি.ইউ.পি এর পরীক্ষা এক সাথেই পড়লো। জীবনের সব থেকে বড় ডিশিসন টাহ তখনই নিলাম। ঠিক করলাম চান্স পাইলে পাবো আর না পাইলে নাই, তবুও ভার্সিটির এ্যাডমিশন-ই দিবো।

‌পরীক্ষা দিলাম। প্রথমেই জা.বি-তে ওয়েটিং। এরপর রা.বি-তে ৬ টাহ দিলাম, এর মধ্যে ৫ টা তেই সিরিয়াল আসল আর ২ টা তে ভাইভার ডাক পাইলাম। এরপর দিলাম বি.ইউ.পি- তে, সেখানেও FASS ও FSSS -এ উত্তীর্ণ হইলাম।

‌ইচ্ছা ছিল যে এগুলোর মধ্যে রা.বি-তেই পড়বো।

রা.বি-তে E ইউনিটে ভাইভা দিলাম। সাব্জেক্ট চয়েজ এ Anthropology দিলাম ৬ নম্বরে। যার কারনে আরও কিছু তথাকথিত ভালো সাব্জেক্ট পাওয়ার কথা থাকলেও Anthropology তেই ভর্তি হলাম। বি.ইউ.পি-তে পরে Sociology আসছিল কিন্তু তেজগাঁও -তে এই বিষয় পড়ার সময় মনে একটা অরুচি চলে আসছিল। তাই ওখানে আর যাই নি।
এইত তারপর ঢাকা ছেড়ে রাজশাহী চলে আসলাম।

তখন থেকে এখন পর্যন্ত জীবনের সেরা সময়টাই পার করছি। সারাদিন আড্ডা,ঘুরাঘুরি ভালোই চলছে। 
‌এই ক্যাম্পাসে আসে অনেক কিছুই পাইছি। কিছু বড় ভাই-বোন পাইছি, নিজের ডিপার্টমেন্ট সহ অনেক ডিপার্টমেন্ট এর অনেক ভালো বন্ধু পাইছি। আর সেকেন্ড টাইমার হওয়ার কারনে ২য় বর্ষেরও অনেক বন্ধু-বান্ধব পাইছি। শুধু একটাই সমস্যা, সেটা হল সেকেন্ড টাইমার হওয়াতে সেম ব্যাচমেট দের ভাইয়া বলার লাগে । তবুও ভালোই আছি।

‌তবে ক্যাম্পাসে এসে একটা জিনিস দেখলাম যে এখানে বেশিরভাগ মানুষ-ই হতাশ থাকতে পছন্দ করে। কেউ হতাশ রাজশাহীর আবহাওয়া নিয়ে, কেউ হতাশ ক্যাম্পাস নিয়ে, কেউ হতাশ ডিপার্টমেন্ট নিয়ে, কেউ হতাশ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আবার ক্লাসে এসি নাই এজন্যেও অনেকে হতাশ। তবে আমি খুব বেশী সুখী না হলেও হতাশ নাহ। ভাগ্যে ছিল বলেই হয়ত এই ক্যাম্পাসের এই ডিপার্টমেন্টে পড়ছি। এই ক্যাম্পাস, ডিপার্টমেন্ট কাউরেই কিছু দিবে নাহ। যার যেটা দরকার তার নিজেরেই সেটা খুজে নিতে হবে। তবেই ভালো থাকা সম্ভব।

এত কিছুর পর শুধু এটাই বলতে চাই যে, যেরকম আছি, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।
#ভালো_থাকুক_নৃবিজ্ঞান_পরিবার 
#ভালো_থাকুক_রাজশাহী_বিশ্ববিদ্যালয়

আসিফ ফয়সাল
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল

Website Link
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.