প্রথম বর্ষের পাঁচটি কাজ:
১. তুমি কোটিপতির সন্তান হলেও- তোমাকে ইনকাম করার চেষ্টা করতে হবে। এতে তোমার রেস্পন্সিবিলি নেয়ার, অন্যকে সার্ভ করার, টাকা পয়সা হ্যান্ডেল করার এক্সপেরিয়েন্স তৈরি হবে। আর ইনকাম করা শুরু করলে সব একসাথে খরচ করে ফেলবে না। বরং অন্য ব্যাংকে আলাদা একাউণ্ট খুলে ২০% সেইভ করে রাখবে।
২. প্রেম করো আর নাই করো। কিছু ফ্রেন্ডশীপ ডেভেলপ করবে। চান্স পাইলে জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থাকবে। কারণ ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ডরাই তোমার সারা জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড।
.
৩. প্রথম থেকেই ইংরেজিটা ভালো করে শেখার চেষ্টা করবে। তুমি জীবনে যাই করতে চাও না কেন। ইংরেজি জিনিসটা তোমাকে পদে পদে এগিয়ে রাখবে।
৪. অন্ততঃ একজন ফ্যাকাল্টি/সিনিয়র কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ লেভেলের ইনফরমাল ইন্টারাকশন রাখার চেষ্টা করবে। যার কাছে পার্সোনাল সমস্যা, পড়ালেখার ঝামেলা, ফিউচার নিয়ে কনসার্ন নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। সে মূলতঃ তোমার মেন্টর/গাইড/কোচ হিসেবে থাকবে।
৫. ক্লাসে যেহেতু যেতেই হবে। তাই ক্লাসে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করবে। পড়ালেখায় ভালো হতে পারলে ভালো। তবে অন্তত মাঝামাঝি লেভেলে রাখার চেষ্টা করবে।
.
দ্বিতীয় বর্ষের পাঁচটি কাজ:
১. পড়ালেখা সিরিয়াসলি না করলে, পড়ালেখার বাইরে এমন কিছু একটা করার চেষ্টা করবে যেটাতে তুমি আশেপাশের অন্য সবার চাইতে ভালো। সেটা হতে ওয়েবসাইট বানানো, পোস্টার ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, প্রোগ্রামিং, লেখালেখি বা অন্য কিছু। এটা পরবর্তীতে প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স বা এক্সট্রা কোয়ালিফিকেশন হিসেবে চাকরি পেতে হেল্প করবে।
২. তোমাকে স্ট্রেজে উঠতেই হবে। মিনিমাম ৫০জন মানুষের সামনে দাঁড়াতেই হবে। সেটা বক্তৃতা দিতে হোক। উপস্থাপনা, নাচ, গান/নাটক, কবিতা আবৃত্তি, যেটাই হোক। এতে তোমার পাবলিকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় কাটবে।
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা by Engineer's Diary
৩. কখনোই ভিডিও গেমসের জগতে প্রবেশ করবে না। তবে ফ্রি সময় পেলে (পূজা বা ঈদের লম্বা ছুটিতে) কিছু অলটাইম হিট মুভি দেখে ফেলবে। পাঠ্য বইয়ের বাইরের জগতে হানা দিবে। সেটা হতে পারে কিছু বিখ্যাত বই (বাংলা বা ইংরেজি)।
৪.পড়ালেখা ঠিক রেখে কোন একটা অর্গানাইজেশনে যোগ দিবে। মিনিমাম একটা অর্গানাইজেশের সব ইভেন্টে যাবে। কমিটি মেম্বার হওয়ার চেষ্টা করবে। এতে তোমার লিডারশিপ স্কিল ডেভেলপ হবে। এবং সিভিতে লেখার মতো একটা জিনিস যোগ হবে।
৫. কোথাও না কোথাও লেখা ছাপানোর চেষ্টা করবে। সেটা গল্প-কবিতা, ইংরেজি আর্টিকেলের বাংলা অনুবাদ বা অন্য কিছু হতে পারে।
.
তৃতীয় বর্ষের পাঁচটি কাজ:
১. তৃতীয় বর্ষে উঠে তুমি যে ফিল্ডে কাজ করতে চাও সেই ফিল্ডের কমপক্ষে দশজন প্রফেশনালের সাথে কানেকশন ডেভেলপ করবে। সেটা হতে পারে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র, দেশি বা বিদেশী ভার্সিটির প্রফেসর। তাদের রিপ্লাই না পাওয়ার আশা নিয়েই রিমেইল করে দিবে। অর্থাৎ তুমি একটু একটু করে নেটওয়ার্কিং শুরু করবে।
২.তৃতীয় বর্ষে থাকতে থাকতেই তোমাকে একটু একটু করে রেজুমি বা সিভি বানানো শুরু করে দিতে হবে। তাহলে আগে থেকেই বুঝতে পারবে যে কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে। এবং সেই গ্যাপগুলার এরিয়াতে ইমপ্রুভ করে ফেলার যথেষ্ট সময় পাবে।
.
Community of Engineers & Engineering Students (CEES)-BD
৩. তুমি যে সাবজেক্টেই পড় না কোন, সেই সাবজেক্টের যেকোন একটা এরিয়াতে টেক্সট বইয়ের/ ক্লাসের পড়ার বাইরে বেশি জানার চেষ্টা করবে। গুগলে সার্চ দিয়ে আর্টিকেল বের করে নিজের ভিতরে কিউরিসিটি গ্রো করার চেষ্টা করবে। তাহলে এটাই হবে হায়ার স্টাডিতে এপ্লাই করার সময় তোমার এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট।
৪. কয়েকজন মিলে ডিপার্টমেন্টে একটা নিউজলেটার বা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে ফেলবে। নিজেরাই মিলে মিশে বিভিন্ন আর্টিকেল জোগাড় করে লিখে দিবে।
৫. ক্লাসমেটদের সাথে মিলে গ্রূপ এক্টিভিটিস করবে। সম্ভব হলে ফ্রেন্ডদের সাথে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবন, সুন্দরবন, কাঁটাবন ঘুরতে যাবে। এতে তোমার টিম ওয়ার্ক এবং সেলফ এওয়ার্নেস ডেভেলপ হবে।
.
চতুর্থ বর্ষের পাঁচটি কাজ
১. বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ক্যারিয়ার ক্লাব, ভলান্টিয়ারিং, ফ্রি ইন্টার্নশীপ, পার্টটাইম জব, প্রদর্শনীর সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, কোনটাই বাদ দিবে না। সম্ভব হলে সবগুলাতে যাবে। এতে তোমার কমিউনিকেশন স্কিল সেই লেভেলে উঠে যাবে। পরে চাকরি লাইফে গিয়ে আমাকে থ্যাংকু দিবি।
২. বিভিন্ন চাকরিতে এপ্লাই করা শুরু করে দিবে। তবে আন্দাজে মান্দাজে চোখ বন্ধ করে সিভি দিবে না। বরং প্রত্যেকটা চাকরির জন্য সিভি কাস্টমাইজ করে তারপর দিবে। তাতে কিছু ইন্টারভিউ দেয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে।
৩. তোমাকে একটা না একটা ইভেন্ট অর্গানাইজ করার মেইন দায়িত্বে থাকতে হবে। সেটা ইফতার পার্টি, বৈশাখী মেলা, rag পার্টি, জব ফেয়ার, এলামনাই রিউনিয়ন। যেটাই হোক না কেন। এতে শিখতে পারবে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের মানুষ হ্যান্ডেল করতে হয়। কিভাবে বাজেট, প্লানিং, মানুষের কাছ থেকে হেল্প আদায় করতে নিতে হয়।
ইঞ্জিনিয়ার'স ডায়েরি পরিবার
৪. পাশ করে বের হওয়ার আগেই তোমাকে বড় ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে তুমি দেশে চাকরি করবে না, বিদেশে হায়ার স্টাডি করতে যাবে, নাকি বিসিএস এর চেষ্টা করবে, নাকি ব্যবসা। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তোমার বর্তমান অবস্থা, ফ্যামিলি এবং কোন আংটা লাগানো থাকলে সেটাসহ সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
৫. ফ্যামিলির সাথে সব সময় কানেকশন রাখবে। কি করতে চাচ্ছ। কিভাবে করার চেষ্টা করতেছ। তুমি ভালো করো, আর খারাপ করো। এক বছরের জায়গায় তিন বছর ফেল মারো। ফ্যামিলিই তোমার নিশ্চিত আশ্রয়। খোলা মনে সাহস রেখে তাদের সাথে শেয়ার করবে। তারা সবসময় তোমাকে আগলে রাখবে।
.
মনে রাখবে- ভার্সিটি শুধু একটা প্লাটফর্ম। এইখানে ভালো করার সুযোগ আছে। আবার লাইফ ধ্বংস করার অপশনও আছে। তাই একটু খেয়াল করে করে লাইফ ঠিক রাখতে পারলে। স্টুডেন্ট লাইফ অনেক বেশি ইফেক্টিভ এবং মজার হয়ে উঠবে।
আর এইটা একটা কমপ্লিট গাইডলাইন। এইটার ৮০% ফলো করতে পারলে তুমি অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে।
.
ঝংকার মাহবুব
Engineer's Diary Blog