কলেজ ডায়েরি : ঢাকা কলেজ ❤️
0
May 08, 2019
মূলত এসএসসি ব্যাচ ১৯ এর জন্য আমার পোস্টটি লেখা, ঢাকা কলেজ সম্পর্কে সব তথ্য, ভর্তি যোগ্যতা, টিচার, ক্যাম্পাস আর টিচিং মেথড সম্পর্কে জানতে পারবে ।
**সতর্কীকরণ বুলি : যদি কলেজে উঠে চুল বড় রাখতে চাও আর কলেজ ব্যাঙ্ক দিতে চাও তবে এ কলেজ তোমার জন্য সুইটেবল নয়, অযথা পোস্টটি পড়ে সময় নষ্ট করবে না ।
কলেজ আদ্যপান্ত :
ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত । কলেজ ঢাকার অন্যতম নিউমার্কেটের পাশেই, এটি ঢাকার ধানমন্ডি থানার অন্তর্গত একটি কলেজ ।
১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই তারিখে রবিবার উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেব ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় । ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ বর্তমান জায়গায় চলে আসে। ২৪ একর জমির ওপর ছিল ঢাকা কলেজ। তবে এরশাদ সরকারের সময় ৬ একর জমি ছেড়ে দিতে হয়। বর্তমান ঢাকা কলেজ ১৮একর ভূমির উপর অবস্থিত । ঢাকা কলেজের মোট হল সংখ্যা আটটি, এর মধ্যে শেখ কামাল ছাত্রাবাস শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের জন্য তৈরি করা হয়েছে, অন্য বিভাগের ছাত্রদের জন্যও অন্যান্য হলে থাকার সুব্যবস্থা আছে । কলেজে ক্যান্টিন রয়েছে, রয়েছে কমন রুম (যদিও খুব একটা ঢুকতে পারবা না, আমি নিজেই ঢুকসি পাঁচ/ছয়বারের মতো ), ক্যান্টিনের পাশেই রয়েছে সুবিশাল পুকুর, এইরকম পুকুর ঢাকার অন্যতম কোনো কলেজ ক্যাম্পাসে দেখতে পারবে না । কলেজ ভবনে মোট ১০ টি গ্যালারি রয়েছে যেখানে বেশিরভাগ বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস হয়। কলেজের পুকুর বরাবর রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ, তার পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ । ঢাকা কলেজের ভবনের অভ্যন্তরে একটি অডিটরিয়াম রয়েছে, যেটি পুরোটাই এসি করা আর তোমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান সেখানেই হবে । অনুষ্ঠানে সারাদেশের কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকা কলেজে উপস্থিত থেকে বরণ করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি ।
কলেজে শিক্ষার্থীদের উপর গোয়েন্দা টাইপ নজরদারি রাখার জন্য দুইটি কমিটি রয়েছে, নিপক (নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটি) এবং তাপক (তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ কমিটি) এই দুই কমিটি তোমার কলেজ জীবনকে অতিষ্ঠ করে ফেলবে । কলেজে ঢোকার সময় তোমার চুল (১ সেন্টিমিটারের বেশি হলেই সেই দিনের এটেনডেন্টস ইন্নানিল্লাহ), ব্যাগ, পকেট চেক করবে তারা । ভিতরে ঢুকতে পারলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন/ফেইস স্ক্যানার দিয়ে এটেনডেন্স দিতে হবে । তারপর যদি মনে করো ক্লাস না করে করিডোর দিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন তোমায় যে কখন তাপকের সদস্য আইডি কার্ড নিয়ে যাবে টেরও পাবা না । আইডি কার্ড দিবে তোমার বাবাকে কলেজে ডেকে (তাকে কলেজে এনে তোমার নামে বলবে, তুমি সিটি কলেজের সামনে ইভটিজিং করো, মারামারি করো, সিগারেট খাও, ক্লাস করো না ইত্যাদি) তারপর বাসায় গেলে তো টিটোয়েন্টি হবেই ❤️
ক্লাসে যদি ঠিকমতো ভদ্র হয়ে না থাকো, লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে ঘুমাও বলো কেউ দেখবে না, তোমার ধারনা ভুল । প্রত্যেক ক্লাসে হাই রেজুলেশনের সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে, বেঞ্চের নিচে শুয়ে ঘুমাইলেও পার পাবা না । ক্লাসে কথা বললেই দৈববাণী শুনতে পারবা - অমুক বেঞ্চের অমুক ছাত্র কথা বলছো/ঘুমাচ্ছো, দাঁড়া ব্যাটা, আইডি কার্ড দেও টিচারকে । কলেজের কিছু কর্মচারী তোমার সাথে একদম নিম্নমানের ব্যবহার করবে, টিচারকে মনে হবে মামা (আমি প্রথমে তানভীর স্যারকে মামা বলছিলাম আইসিটি ল্যাবে 😂)
ক্লাস টাইম সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা, ল্যাব শুরু হলে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত ( ১১.০০-১১.৪৫ পর্যন্ত ব্র্যক) । কলেজে অনার্সের পরীক্ষা থাকলে বিকালে ক্লাস হতে পারে, সেইক্ষেত্রে ২.০০-৪.১৫ । সকাল ৭.৩০ থেকে ৮.০০ টা পর্যন্ত প্রেসেন্ট দিতছ পারবা, ৮.০১ থেকে ৮.১৫ পর্যন্ত লেট প্রেসেন্ট, তারপর দিলে এবসেন্ট । তিনদিন লেট প্রেসেন্ট একদিন এবসেন্ট গননা করা হয় । কলেজে লেট বা এডসেন্ট হলে ডাইরেক্ট তোমার বাবার ফোনে মেসেজ চলে যাবে, ভুলেও বাবা মার নাম্বারের স্থানে তোমার নাম্বার দিলে মহাবিপদ ওয়েট করবে তোমার জন্য ।
কলেজে যাতায়াতের জন্য চারটি বাস রয়েছে যা বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকবে (কেনো থাকবে এইটা কলেজে আসলে বুঝবা) পদ্মনীল চলে খিলগাঁও রুটে, শঙ্খচীল চলে রামপুরা রুটে, পুষ্পক চলে সাইনবোর্ড রুটে আর শঙ্খনীল চলে মিরপুরের রাস্তায় । এই বাসের জন্য নিজেরে ডিসিয়ান বলে গর্ব করতে পারবা ❤️ ঐই কলেজে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান, হূমায়ুন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, শহীদ গেরিলা রুমী, কবি শামসুর রাহমান, বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামাল, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, কাজী মোতাহার হোসেন, জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, আভাস ব্যান্ডের ভোকাল তুহিন ভাই অভিনেতা সজল নূর আর আফরান নিশো প্রাক্তন ছাত্র ছিলো । কলেজ করিডোরে হাঁটার সময় এইটা মনে হলে তোমার ভেতর গর্ব কাজ করবে ।
কলেজে ভর্তি হবার সময় অনলাইনে ৩৫০০ টাকা পে করা লাগে, এক বছরে আর কোনো চার্জ নেই । হলে উঠলে সিট কনফার্ম করার জন্য ৬১৫০ টাকা দিতে হয়, এরপর এক বছরে আর কোনো চার্জ দিতে হয় না । খাবার হল ডাইনিং এ মিল ৩৫ টাকা। শুধু বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আলাদা হল আছে, শেখ কামাল ছাত্রাবাস । অন্য বিভাগের ছাত্রদের জন্যও অন্যান্য হলে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে ।
কলেজে ভর্তি রিকোয়ারমেন্ট : ( বিস্তারিত কলেজ ওয়েবসাইটে)
বিজ্ঞান বিভাগ : জিপিএ ৫.০০ টোটাল নাম্বার লাগে ১১৭০+ (গতবার
লেগেছিলো)
আসন সংখ্যা ১০০০
মানবিক বিভাগ : জিপিএ ৪.৭৫
বানিজ্য বিভাগ : জিপিএ ৫.০০
(এটি এখনো প্রকাশ হয়নি, কিপ ফলোয়িং অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ)
বর্তমান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হলেন নেহাল আহমেদ, তিনি বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাগ্নে, অতীতে ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন, এরপর সরাসরি উপাধ্যক্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হন, এই সপ্তাহে তিনি ঢাকায় কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়েছেন । তার উপাধ্যক্ষ হবার পরই কলেজের অতিরিক্ত নিয়ম-কানুন চালু হয় । তখন থেকে ক্যাম্পাস রসকষহীন হয়ে আছে ।
ঢাকা কলেজে রাজনীতি আছে, পড়াশোনা হয় না, ছেলেরা গুন্ডা এমন অনেক কিছুই শুনবা তোমরা । আমরাও শুনছি এগুলা । বাস্তবে ঢাকা কলেজে ইন্টার লেভেলে কোনো রাজনীতি নাই, এখানে যারা পড়ে তারা প্রত্যেকে জিপিএ ৫ পাওয়া স্টুডেন্ট । কলেজের অনার্সের ভাইয়েরা তোমাদের আদর করবে, যে কোন বিপদে তোমাকে সাহায্য করবে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ । তবে দুইদিন পর পর সিটি কলেজ/আইডিয়াল কলেজের সাথে গ্যাঞ্জাম লাগতে পারে 😆
পড়াশোনার ব্যাপারে কোন কলেজ তোমাকে পড়া গেলাবে না, ঢাকা কলেজের টিচাররা দেশের সেরা এইটা তোমাকে মানতে হবে না, ক্লাস করলেই বুঝতে পারবে । পদার্থবিজ্ঞানের তানভীর রুমী স্যার কলেজের বেস্ট টিচার । পড়াশোনা সবসময়ই তোমার নিজের কাছে ।
কলেজে এটেনডেন্টস ৮০% না হলে বাবা মা শত হাতেপায়ে ধরলেও পরীক্ষা দিতে পারবা না, আর ৫০% মার্কস না পেলে ফেইল, ফেইল করলে প্রোমোট হতে পারবা না । কলেজে সিটি পরীক্ষা, হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা, ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা হয় । পাশ না করলে পরবর্তী ক্লাসে উঠতে পারবা না ।
ঢাকা কলেজের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ইউনিটি ❤️ প্রত্যেক সহপাঠী প্রত্যেকের ভাই এখানে, হলের ছেলে আর বাইরের ছেলে বলে কোনো ভেদাভেদ নেই । সবাই সবাইকে দেখে রাখা একজন ডিসিয়ানের সাধারণ বৈশিষ্ট্য । বড় ভাইয়েরা সবসময় জুনিয়রের সাহায্য করবে সবজায়গাতেই ।
এইটাই ঢাকা কলেজ ❤️ প্রাণের ঢাকা কলেজ
সাব্বির আহম্মেদ
বিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা কলেজ, ঢাকা ।