চুয়েট ভর্তি পরীক্ষার গল্প ১ --( পুরোটা পড়ে দেখবেন আশা করি from Chaity Mam❤)


পরীক্ষার কেন্দ্রে গার্ড দিচ্ছি,এক ঘন্টা পার হয়েছে হয়তো,ঠিক মনে পড়ছে না।😮 হঠাৎ সামনের সারিতে বসা একটি ছেলের উপর চোখ পড়ল।👀 পাতলা গড়ন, স্বল্প উচ্চতা আর ধূসর বর্ণের এক বালক,পোষাক আষাক-বেশ ভূষায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানই মনে হল। ছেলেটা কেমন যেন ছটফট করছে। 😶আরো একটু খেয়াল করার পর দেখলাম ও কি যেন মনে করতে চাইছে,পারছে না। না পেরে বারংবার কপাল চাপড়াচ্ছে, চুল টানছে, কলম ছুড়ে ফেলতে চাইছে,ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে,কি রেখে কি করবে কিছুই বুঝছে না সে।😞বুঝলাম ওকে শান্ত আর ধীরস্থির করতে না পারলে বিপদ সন্নিকটে,যে কোন সময় নারভাস ব্রেকডাউনের ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।😱তৎক্ষনাৎ কাছে গেলাম ছেলেটার। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম,"কী হয়েছে বাবা?"।
ছেলেটা মুখ তুলে তাকালো; চোখ মুখ আষাঢ়ের ঘনকালো মেঘের মত বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন,😟শীতের রুক্ষ আবহাওয়া ও শুষ্কতা চেহারাকে মলিন করে তুলেছে।ছোট মুখটা চুপসে গিয়ে যেন আরো ছোট হয়ে গেছে।😖

--কী হয়েছে বাবা?

--অংকটা মিলাতে পারছি না ম্যাডাম। বইয়ের অংক, আজ সকালেও কষে এসেছি অংকটা অথচ এখন উত্তর মিলছে না। (তার মাথা চাপড়ানো অব্যাহত আছে 😒)

--প্রশ্ন একটা মিলছে না তো কি হয়েছে,আরও তো অনেক প্রশ্ন আছে। একটা যে কোন কারণে না মিললে সেটার পেছনে সময় ব্যয় না করে পরের প্রশ্নে চলে যাও।এই অংক সময় পেলে পরে আবার করার চেষ্টা করো। আর তার চেয়ে বড় কথা তুমি আগে মাথা ঠান্ডা করো। পরীক্ষার হলে মাথা গরম করলে পারা জিনিসও পারবে না। এভাবে টেনশনে অস্থির হয়ে পড়লে কোনটারই সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব না।

--"অংক মিলছে না ম্যাডাম,কিন্তু আমাকে যে চান্স পেতে হবে। বন্ধুদের সবার ভাল ভাল জায়গায় হয়ে গেছে,শুধু আমিই বাকী।বাসা থেকে অনেক প্রেসার,ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে আর চুয়েটই ইঞ্জিনিয়ারিং এর সর্বশেষ পরীক্ষা"--ছেলেটা যেন ওর এতদিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হবার দৃশ্য কল্পনা করতে করতে একনাগাড়ে কথাগুলো বলেই যাচ্ছিলো। 😫😫😫
(বাসার প্রেসারের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল আর প্রেসারটা যে কি পরিমাণ তা না বোঝার কোন অবকাশই রইল না। নিজের ছেলের কথাও মাথায় আসলো।)

ছোট্ট করে আস্থা আর মমতা জড়ানো হাতটা 👋ওর কাঁধের উপর রেখে..
--একদম চিন্তা করো না,তুমি ভাল কিছুই পাবে শুধু কনফিডেন্স রাখো নিজের উপর। আর এখানে যদি নাও হয় তবু ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস হারিও না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিংই পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই,ভাল করার ইচ্ছা আর মানসিকতা থাকলে যেকোন স্থান থেকেই ভাল করা সম্ভব।✌আর ভাল সাবজেক্টে খারাপ রেজাল্ট করার চেয়ে লেস ডিমান্ডিং সাবজেক্টে পড়ে ইর্ষণীয় ফলাফল ও সাফল্য অর্জন করা অনেক উত্তম।👏

গ্রীষ্মের দাবদাহে ছটফট করতে থাকা কোন বিহঙ্গ 🐦অথবা ধূ ধূ মরুভূমিতে হাটতে হাটতে গলা শুকিয়ে যাওয়া ক্লান্ত পথিকের👤কাছে এক ফোঁটা জল💧যেমন অনুভূতি জোগায়,সেরকমই হল ছেলেটার। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ, সোনার হরিণের 🐴পেছনে ছোটা,ব্যর্থতায় নিমজ্জিত, হতাশার সর্বোনিম্ন পর্যায়ে অবরোহনকারী ছেলেটি😓 একবিন্দু অভয়☺,এক চিলতে ভালবাসা ❤ আর এক মুঠো ভরসা👍 পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লো। ওর দুচোখ ছলছল করে উঠলো। 😢চাপা কষ্টগুলো চোখের অম্বু হয়ে বের হওয়ার উপক্রম প্রায়, কিন্তু শেষমেষ পুরুষসুলভ💪 আচরণের কাছে হেরে গিয়ে বুকের মধ্যেই চেপে গেলো।আর দশটা ছেলের👥 মতই ব্যাথা লুকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে সে পুনঃরায় আশার সঞ্চার করে লিখতে শুরু করলো।

মোরাল অফ দা স্টোরিঃ অভিভাবকগণ অনুগ্রহপুর্বক আপনাদের সন্তানদের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেন না ( A+ পেতে হবে,ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে ইত্যাদি)। সন্তানের পছন্দ ও সাচ্ছন্দ্যের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করুন। মনে রাখবেন,আপনার অযাচিত আশা পূরণ করতে গিয়ে সন্তানের সুস্থ বিকাশের পথ যেন অবরুদ্ধ হয়ে না যায়,আপনার পরম স্নেহের সন্তানটি যেন হারিয়ে না যায়।

রুম নম্বরঃ ১১৪ , New Academic Building 02 ( Behind Civil building)

লিখেছেন,

Nahida Sultana Chaity Mam

Lecturer,

Department of humanities(English),

CUET.

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.